লেখার ডাগর মাঠ


শনিবার, অক্টোবর ২৭

মহাভারত

#মহাভারত

কৃষ্ণ জানতেন , দ্রৌপদীর প্রতি কর্ণের গোপন আসক্তি ছিল । তাই দুষ্ট অভিসন্ধি পরায়ণ মানুষের মত কৃষ্ণ একথাও উল্লেখ করতে ভুললেন না যে , “ দ্রৌপদী দিবসের ষষ্ঠভাগে তোমার সমীপে আগমন করিবেন । ”- এরচেয়ে হীন প্রস্তাব কল্পনাও করা যায় না ।

ছিঃ ছিঃ ! এই কি একটা ভগবানের মতো কথা হল ? ভীমের দ্বারা “ কুকুর ” অভিধায় লাঞ্চিত কর্ণকে দেবতা ও পুরোহিতদের স্বার্থে কৃষ্ণের আজ বিশেষ প্রয়োজন । তিনি তাকে রাজ্যের লোভ দেখিয়ে দলে টানতে চায় ।

কুপ্রস্তাবে টলানো গেল না কর্ণকে । কৃষ্ণ কে কর্ণ বললেন,............কুন্তী আমাকে আমার অমঙ্গল উদ্দেশ্যেই পরিত্যাগ করিয়াছিলেন । ”
বললেন, ওদিকে আমার পালক পিতা অধিরথ ও মাতা রাধা আমাকে সস্নেহে পালন করেছেন ।  আমি তাঁদেরই জাতিকুল বিবাহ করে যে ভার্যা ও পুত্রপৌত্র লাভ করেছি , ভালবাসি আমি তাঁদের । না না , কৃষ্ণ ,“ অখণ্ড ভূমণ্ডল বা রাশীকৃত সুবর্ণের বিনিময়ে , হর্ষ বা ভয়ে এই সকল অন্যথা করিতে আমার সামর্থ্য নাই ।
বললেন , দুর্যোধন আমাকে রাজ্য দান করেছেন , বন্ধুভাবে গ্রহন করেছেন এবং আমারই উপর নির্ভর করে আছেন ।
“ আর আমিই যদি সেই সুবিস্তীর্ণ রাজ্য প্রাপ্ত হই, তাহা দুর্যোধন কেই প্রদান করিব ।

ম্লান হয়ে গেলেন কৃষ্ণ কর্ণদ্যুতির প্রখর ঔজ্জ্বল্য ।

( কুন্তী কর্ণকে ত্যাগ করে আজ এই প্রবাদ বাক্য মিথ্যা হয়ে গেছে “ কুপুত্র যদিবা হয় কুমাতা কখনো নয় । ) কিন্তু জনশ্রুতিটির শেষ দুটি শব্দ কে মানতে পারছি না । কুন্তী ছিলেন কুমাতাই ।

কর্ণ তার কানীন পুত্র ( বিবাহ পূর্বে জাত সন্তান ) । সেকথা সেই দিন সেই রণক্রিড়া ভূমিতে বললে ঘটনার গতিপ্রকৃতিই বদলে যেত , সে কথা আজ পঞ্চপাণ্ডবের প্রানভিক্ষা করতে এসে উচ্চারণ করতে কুন্তীর জিহ্বা অসাড় হয়ে গেল না ।

আবাক হয়ে শুনলাম , শুধু পরিচয়ই নয় , কুন্তী কর্ণকে ধর্মোপদেশও দান করছেন ।

বলছেন, “ হে বৎস ! তুমি আমার গৃহে , আমার গর্ভে জন্মগ্রহন পূর্বক মোহবশতঃস্বীয় ভ্রাতৃগণের সহিত সৌহার্দ্য না করিয়া এক্ষণে যে দুর্যোধনের সেবা করিতেছ ইহা কি তোমার সমুচিত কর্ম ? মহাত্মাগণ ধর্মবিনিশ্চয় বিষয়ে পিতামাতাকে সন্তুষ্ট করা পুত্রের প্রধান ধর্ম বলিয়া কীর্তন করিয়াছেন ।

কর্ণ বললেন ,“ ক্ষত্রিয়ে ! ( না , মাতা বলে এ নারীকে সম্বোধন করতে ঘৃণা বোধ করেন রাধেয় কর্ণ ) আমি আপনার বাক্যে আস্থা করি না , আপনার বাক্যানুরূপ কার্য করিলে আমার ধর্মহানি হইবে । .........আমি ক্ষত্রিয়কুলে জন্মগ্রহন করিয়াছিলাম । কিন্তু আপনার নিমিত্তই ক্ষত্রিয়ের ন্যায় সৎকার প্রাপ্ত হই নাই । অতএব আরকোন শত্রু আপনা অপেক্ষা আমার অধিক ক্ষতি করিবে ? আপনি ক্ষত্রসংস্কার প্রাপ্তিকালে আমার প্রতি অদৃশ্য নির্দয় ব্যবহার করিয়া এক্ষণে আমাকে আপনার কার্যসাধনে অনুরোধ করিয়াছেন । আপনি পূর্বে মাতার ন্যায় আমার হিতচেষ্টা না করিয়া এক্ষণে স্বকীয় হিতবাসনায় আমাকে পুত্র বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন । ”

জগতে কুন্তীর মত কু-মাতা বস্ততই বিরল । আর কর্ণের মত সত্যনিষ্ঠ ত্যাগী মহাত্মাও অদ্বিতীয় ।

          সুত্র  -কুরুক্ষেত্রে দেবশিবির / বীরেন্দ্র মিত্র

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন