লেখার ডাগর মাঠ


শুক্রবার, জানুয়ারী ৬

দেবজ্যোতিকাজল


বাবাকে নিয়ে 
---------------------


আজ ঘুম থেকে ওঠে সকালটা স্তব্ধ হয়ে গেলো । মনটা নুয়ে পড়ল শীতের স্যাঁতসেঁতে সকালে । ঠাণ্ডা প্রচণ্ড থাকায় সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠি ।  ঘরে মা নেই । সারা দিন-রাত একা একাই কাটাচ্ছি । একাই রান্না করছি । একাই খাচ্ছি । অবশ্য এইটি এই নতুন না । কাল রাত্রে ঘুম পাচ্ছিল না । কোন এক অদৃশ্য কারণেই ঘুম পাচ্ছিল না । এই ঘুম না পাওয়াটা আমার জীবনে অদ্ভূত কোন ঘটনা না । ষোলো বছর বয়স থেকে আজ অবদি বহুরাত্রি আমি জেগেছি । কখনও শারীরিক কারণে কখনও ব্যাক্তিগত কারণে । তাই এটা আমার জীবনের পরম বন্ধু । যখন অসুস্থ ছিলাম । তখন তো রোজ রাত্রি জাগতাম । মাঝে মাঝে অবশ্য ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাতাম । তাই রাত্রি জাগাটা আমার জীবনের নতুন কিছু না । কাল রাত দুটোয় ফেসবুক থেকে বেরিয়ে ঘুমাবার চেষ্টা করলাম । এক সময় হাল্কা একটা ঘুমেও বিভোর হয়ে পড়লাম । তন্দ্রা ঘুমের মধ্যে বাবা এলো । বাবা মারা যাবার পর কখনও তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি বলে মনে পড়ছে না । বলতে গেলে এই প্রথম বাবা কে নিয়ে স্বপ্ন দেখা । আমার বাবা ছিলেন একজন সৎজন মানুষ । আমি অনেক কাছে থেকে দেখেছি । তিনি কখনই অসৎ চিন্তা করতেন না । বাবা ব্যবসা ক্ষেত্রেও অতিসৎজন ব্যক্তি ছিলেন । তাঁর জীবন থেকে অনেক কিছু গ্রহন করার ছিল আমাদের । কিন্তু তেনার জীবনের প্রভাব আমাদের উপর কতটা পড়েছে বুঝতে পারি না । 

বেশি সম্ভব এই মাসটা বাবার মৃত্যু মাস । 1999 সালে বাবা মারা গেছেন । বাবার মৃত্যুর চেয়ে , বাবার মৃত্যুর পরিবেশটা ছিল অতি দুঃখ জনক । বাবাও হয়তো কখনও ভাবতে পারেননি । অন্যের বাড়িতে অস্বাস্থ্য পরিবেশে তেঁনাকে এভাবে চলে যেতে হবে । তবুও এটিই সত্য বাবার জীবনে । বাবা অসুস্থ হয়ে বিছায় পড়ে দেড় মাস বেঁচে ছিলেন । যাই হোক । কাল রাত্রে বাবার স্বপ্ন দেখেছি । স্বপ্নটা ছিল ছোটবেলার । আমি একদিন হাইস্কুলের পিছন মাঠ থেকে বল খেলে সন্ধ্যা গরিয়ে যাবার পর বাড়িতে ঢুকেছিলাম । কথাটা বাবা হাট থেকে এলে মা বলে দিয়েছিল । বাবা বাড়িতে ঢুকেই মাকে আগে জিজ্ঞেস করত , “আমরা স্কুলে গিয়েছিলাম কিনা ।” এটা বাবার দৈনন্দিন রুটিন ছিল যে , আমরা সারাদিন কি করলাম মায়ের কাছ থেকে তা জানতো । মাও বলে দিত । ঠিক সেই ভাবেই আজকের ঘটনাটাও মা বলে দেয় বাবাকে , আমি আজ রাত্রি করে বাড়িতে ঢুকেছি । আমাদের সময় এটা নিয়ম ছিল । সন্ধ্যে লাগার আগেই বাড়িতে ফিরতে হবে । যেখানেই থাক তুমি । তা না হলেই কপালে কুমদ জুতি জুটবে । বাবা হাট থেকে ফিরতে না ফিরতেই আমার বাড়ি ফেরার অভিযোগটা বাবার কানে তুলেছিলেন মা । বাবা হাত পা ধুয়ে ঘরে ঢুকে । টিফিন খেয়ে । বিছানায় বসে বাবা আমাকে ডাকল । আমি গুটিগুটি পায়ে গিয়ে মাথা নিচু করে বাবার সামনে দাঁড়ালাম । বাবার স্বভাব ভঙ্গিতে আমাকে জিজ্ঞেস করল , “ মা যা বলল ঠিক ?”

আমি মাথা হেলিয়ে বললাম “ ঠিক ”

বাবা বলল , “ আমার দিকে তাকা । মাথা নিচু করে আছিস কেনো । ”

আমি তবুও মাথা নিচু করে রইলাম । বাবা বলল , “ কেনো দেরি হলো বাড়িতে ঢুকতে । ”

আমি বললাম ,“ হাইস্কুলের পিছন মাঠে বল খেলে । সুবল মন্সীদের বাড়িতে গিয়েছিলাম । তাই বাড়িতে ফিরতে দেরি হলো । ”

বাবা সুবলকে চিনত বলে ও প্রসঙ্গে না গিয়ে ফুটবল খেলা নিয়ে প্রশ্ন করল , “ তুই মাঠের কোথায় খেলিস ? ”

আমি বললাম , “ গোলিতে ।”

বাবা বলল, “ বল আসলে কি ভাবে ধরতে হয় তুই জানিস ?  ”

আমি উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম । 

আসলে কিভাবে গোলিকে বল ধরতে হয় বাবা তারই দুই চারটা টিপস আমাকে দিলেন । আমি তখন শিওর হলাম । আজকের মত বাঁচলাম । বাবা আমাকে খুব একটা মারত না । কর্তা বেঁচে থাকা কালীন আমাকে কেউই মারতে পারত না ।  কর্তা মানে বাবার মাকে আমরা কর্তা বলে ডাকতাম । কর্তা আমাকে ভীষণ ভালবাসতেন । আমি না কি যেদিন হই সেদিন রাত্রে কর্তা ঠাকুরদার স্বপ্ন দেখেছিল । আমি নাকি ঠাকুর দা হয়েই জন্মেছি । এই কারণেই কর্তা আমাকে ভীষণ ভালবাসতেন । রাত্রে কর্তার সাথেই ঘুমাতাম । খেতামও কর্তার সাথে । কর্তা যখন মারা যায় তখন আমি প্রাইমারি স্কুলে পড়ি । কিন্তু যত বড় হয়েছি । ততই কর্তাকে মিস করেছি ।   তারপর আমিও আমার জীবন থেকে এগুতে পারিনি । হঠাৎ করে আমার জীবনেও একটা বিপর্যয় নেমে এলো ।   কেননা তার কয়েক বছর পর পরই আমিও অসুস্থ্য হয়ে বিছানাকে সঙ্গী করি । ঘটনাটা ঘটলো জৈষ্ঠ মাসে । ঠিক কেল্লাপুষির মেলের কয়েক দিন আগে । ইংলিশের 1984 সালে ।

আজ অনেক দিন পর স্বপ্নে এই ঘটনাগুলোই দেখলাম । বাবা আমাকে ফুটবল খেলার টিপস দিচ্ছেন । কিন্তু বাবা তো চলে যাওয়ার আগে জানত । তার ছেলে হাঁটতে দৌড়াতে পারে না । তবুও কেনো এমন স্বপ্ন দেখলাম ।  পরে জেনেছি বাবাও না কি ভাল বল খেলতেন ।

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৬

আমার কথা



আমি 97-98 সাল থেকে কোন রকম ধর্মীয় উৎসবে সামিল হই না । সারাদিনে একবারও ঈশ্বরের নাম নিই না । তার কাছে হাত জোড় করে প্রার্থনা করে কখনই আর বলি না, ঠাকুর তুমি আমায় ভাল রেখো । তখন আমি তরুন ঈশ্বর অবিশ্বাসী । তখন প্রথম প্রথম ভগবান শব্দটা মুখ ফসকে বেরোলেও । এখন মুখ ফসকানোটা আর হয় না । সুযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে বলতে পিছ পা হয় না । তিনি যে মিথ্যা, এই বিশ্বাসটাকে একদম অন্তরস্থলে প্রতিস্থাপন করতে পেরেছি । তাই আর তার বিরুদ্ধে বলতে পাপের ভয় লাগে না । কৈ তবুও তো আমি বেশ আছি । আগের তুলনায় অনেক ভাল আছি । বরং যখন ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলাম তখনকার দিনগুলো, মানে শরীরের অসুখে আমি ভীষণ কষ্টে থাকতাম । এখন আমি বিশ্বাস করি, আত্মশক্তিই একজন মানুষের বড়ো জীবনীশক্তি । জীবন মনেই চড়াই উৎরাই । আত্মশক্তি থাকলে একজন মৃত মানুষ পূর্ণর জীবন ফিরে পায় । আমার জীবনীশক্তি বাড়িয়েছে , প্রথম ডেলকার্নিগী ,পরে বিভিন্ন বই । আমি নিজেকে চেনবার চেষ্টা করি । নিজের ভেতরে যেটি আছে তাকে ধরার চেষ্টা করি । যত রকম কারণ আছে , তার বাস্তব ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করি । তাই আমার আর ঈশ্বরের প্রযোজন হয় না । ঈশ্বর কে ডাকার প্রয়োজনীতা বোধকরি না । 

আমার জীবনটা আমার । আমার কষ্ট ও আনন্দটা আমার । তাই আমি আমাকেই ভক্তি করি । আর মনে মনে বলি হে ঈশ্বর তুমি যদি সত্যিই থেকে থাকো তবে তোমাকে চ্যালেঞ্জ আমাকে তুমি দুঃখ কষ্ট দিয়ে হারাতে পারবে না । আর যদি তুমি ( ভগবান ) না থাক তবে আমি ঠিক, তুমি মিথ্যা । যারা তোমার মিথ্যার পিছনে ছুটছে তাদের নিজেকে চেনার উপায় নেই বলেই তোমাকে আকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি আমার বর্তমান জীবনকে । যে সত্য ,আমার কাছে সত্য তা শুধু বিশ্বাস না রীতিমতো পরীক্ষিত । তুমি যে সত্য তার কোন প্রমান আমি পাই নি । তোমার ভূমিকার কোনো বহিরপ্রকাশ আমি দেখি নি । তুমি যে আছো তার একটা সলিড প্রমান বা যুক্তি চাই । তুমি যে শুধুই বিশ্বাস , এ পর্যন্তই তুমি শেষ ।

তবে হ্যাঁ, আমি 97-98 সাল থেকে যে জীবন অতিবাহিত করছি । তার সঙ্গে আমার মা’কে যুক্ত করতে পারি নি । তার ঠাকুরের নকুল দানা, ধুপকাঠি থেকে যা চাহিদা তার সব কিছুই আমি জোগান দেই । তবে মাঝে মাঝে মা’কে প্রশ্ন করি, এই সংসারের সুখের জন্য যত পুজো ব্রত করেছো তার কি হোদিস তুমি পেয়েছো ? পাও নি । এত গুরু সঙ্গ , প্রতি মাসে কিছু না কিছু পুজো বা ব্রত । সারা বছর দেখেছি চলছে । এখন এটাই বাস্তব, পরের বাড়িতে থাক , এই বয়সে এসেও রান্না না করলে খাওয়া জোটে না । তাহলে কেনো এত বিশ্বাস যে ঈশ্বর আছেন । তিন সন্তান তিন জায়গায় । কেউ প্রতিবন্ধী, কেউ দূরাগ্যব্যধি নিয়ে জীবন যাপন করছেন । আবার আরেক সন্তান তুমি বেচে আছো না মারা গেছো সেটুকুর খোঁজ নেবার কর্তব্যবোধ কর না । তাহলে কার মঙ্গলের জন্য এত কিছু করেছো । মা শুধু শুনে । বোঝার চেষ্টা করলেও হয় তো নিজের বিশ্বাসের কাছে হেরে জান । যাই হোক আমি কারুর মনের উপর খবরদারির পক্ষে নন । আমি আমার কথা বলতে পারি । যার যেমন জ্ঞান সে তেমন করে গ্রহন করবে এই লজিকেই আমি বিশ্বাসী ।

সোমবার, অক্টোবর ৩

ঝোড়ো শ্লোক

বাহির দরজা যে দেয় পাহারা
সে আমার দেহোজ প্রহরি
হতে পারে 
আবার নাও হতে পারে সে
কোন লাঠিওয়ালা ক্লাস টিচার
                           কিম্বা দোহার