লেখার ডাগর মাঠ


বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৩০

একটি মৃত্যুর পর

একটি মৃত্যুর পর
ডুবে গেল ক্লান্ত-সূর্য পশ্চিমে ,
জন্মাবে না আর পুবের জরায়ু ।

আমি নিশ্চিত ,
সে চলে যাওয়া মানে ছিল
আমাকে থামিয়ে দিয়ে যাওয়া
ঘুমিয়ে দিয়ে যাওয়া আমার হৃত্কোষ
জড়িয়ে দিয়ে যাওয়া বসন্ত মৃতদেহ ।

যা কেবল মাত্র বিচ্ছিন্ন ,
                       নিরীহ অথচ কষ্টের ।

মৃত্যু মানে যে
শুধু চলে যাওয়া নয়
এই প্রথম জানলাম ,

মৃত্যু মানে
ঘরগুলো বুড়ো হয়ে যাওয়া
দিনগুলো আগুন হয়ে যাওয়া
বালিশগুলো মরে যাওয়া সারারাত

মৃত্যু মানে
চোখের কাছাকাছি সিক্ত নীল
মুখের উপরে মেঘ হয়ে ঝরে পড়া ।

একটি মৃত্যুর পর ,
ডুবে গেলাম আমি
মৃত বাবার ক্লান্ত চোখে
না ডুবা মুখের আড়ালে

একটি মৃত্যু মানে
এতবড়ো সত্যি রৌদ্রে পুড়ে
যুবক হবে , ভাবি নি কখনও ।

কেবলমাত্র আমিই হারালাম
মুঠোভর্তি লবন মেশানো লম্বা জীবন ।

একটি কাব্যিক পুনর্জন্ম

সাদা আকাশ , পৃষ্ঠা ভরা মুদ্রণ
একটি বিলীয়মান সীমানায়
             উজ্জ্বল গর্ভবতী কবি-
          প্রচ্ছদে , বৃষ্টি রঙে ঝরে ।

বেপরোয়া চারপাশ , স্বাধীন অন্ধকার
          মূখ্য ভূমিকায় রাত্রি-নদী-নারী
কবিতা প্রসবের ছন্দ খোঁজে একাকীত্বে ।

ডুবন্ত নীচে , জল থেকে মৃত্তিকা
কাব্যিক ড্রেজিং পরিনত হয়
                 নিচ্ছিদ্র পদ্য জলাশয়

আর মনের কোণে প্রসারিত সব
সম্ভাবনার কবিতারা নিরবে কাছে আসে
কাব্য বৃক্ষের সাহসী ছায়ার গভীর ছড়াকারে ।

আমি সমতলে দাঁড়িয়ে দীপ্ত বিনোদন
ছুড়ে দেই , জলের প্যাচানো ধোঁয়ায়
খুঁজে পাই আমি কবিতা লেখার সূত্র ।

যখন বৃষ্টি পড়ে
কবিতার ত্বকে কূয়াশা তৈরি হয়
ধোঁয়াটে গন্ধ কে কাব্য মনে হয় ।

মেঘমালার মেঘের মধ্যে , উড়ন্ত বৃষ্টি,
নূপুর পায়ে চঞ্চল শিশু নটোবর ;
অনুপ্রেরণার জলোচ্ছ্বাস
অনুভূতির বিন্দু জলের মহাসমুদ্র ,
কবিতারা হেসে ওঠে ঠোঁটের সহস্র রেখায় ।

অনাবৃত জলো-স্রোতে
শিল্পকর্ম-কবিতারা তরঙ্গ জন্মায়
               কাব্য ত্বক ধুইয়ে দিয়ে ।

তাই ,
কবিতার দ্বারা কবি গর্ভবতী -
             হয়ে যায় । বুদবুদ প্রবাহে ।
কল্পনায় বেড়ে ওঠে দু-হাত এক করে ,
                         কবিতা সহবাসে
গভীর রহস্যে প্রকাশ পায় কল্পতরু  লাইন
আর , অজানা মেঘ পরিচিত হতে
ছুটে আসে কাব্য আলোর ঝুড়ি নিয়ে ।

আমি জীবন যন্ত্রণায়
জীবন্ত সূত্রে ভেসে ওঠি একাকারে
প্রাচীন স্মৃতি নিয়ে পুনর্জন্মের নদীতে ।

।। একটি কাব্যিক পুনর্জন্ম ।।
দেবজ্যোতিকাজল

মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৮

ঠিকানা

ঠিকানা
-----------

আমার কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই
প্রতিদিনের মতোই আমি যাযাবর ।

আমার স্থায়ী ঠিকানা বলতে,
                         মোবাইল নাম্বার
মুক্ত পৃথিবীতে , নিজস্ব ঠিকানা বলতে
                                 সংখ্যা দশ ।

নীল দেয়াল , অনুর্বর চোখ আমার
দুপুর আকাশে , অনেকটা দূরে–
ঠিকানা খোঁজে । প্রাচীন স্পর্শ নিয়ে ।

অত বড়ো একটা বাড়ি থাকতেও
আমার কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই
নেই কোনও ডাক-পিয়নের হাক-ডাক ।

আমার অবশ্য মাঝে মাঝে
মোবাইল ঠিকানায় কথা আসে
পরিচিত বা আত্বীয়দের ঠোঁট ছুঁয়ে
“ কেমন আছি আমি ” মাটিচাপা স্বরে ।

তাতে , আজ-কাল আর মন ভ’রে না
পুনরাবৃত্তি স্মৃতির সরণী ,
                       স্থায়ী ঠিকানা খোঁজে ।

ডাকবাক্সের দরজায় যে সব চিঠি
এত-কাল যাওয়া-আসা ছিল ।
দত্তপাড়া লেন , তিনমাথা মোড়ে ।
দত্তবাবু সে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে গেছেন
তারপর থেকেই আমি ঠিকানাহীন ।

লোকটা স্বপ্ন দেখেছিল
শেষ কবিতা লিখবে , স্থায়ী ঠিকানায় বসে

কিন্তু , আজ-কাল ,
সে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়লে–
আর সাড়া মেলে না কিছুতেই
ছেয়ে গেছে দ্রাক্ষালতা ঠিকানাটি
বাঁকিটা ছাইয়ের আস্তরণে ধূয়া ।

আমার ইন্দ্রজাল স্মৃতিগুলো
                    প্রতীক্ষায় একাকার
অনবরত কড়া নাড়ে দরজায়
                           প্রতিধ্বনী কষ্ট ।

সাড়া নেই । তবুও খুঁজে যাই কড়া নেড়ে
                          বর্তমান ঠিকানা ,
জানি , তবু ফিরে পার-না স্থায়ী ঠিকানা ।

আমার কোন স্থায়ী ঠিকানা-
                           আর জন্মাবে না
আমার স্থায়ী ঠিকানাটি
                     এখন সুদৃশ্য নপুংসক ।

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৩

দেশ ও মৌলিক অধিকার

স্বাধীন সার্বভৌম ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নাস্তিক । কিন্তু তিনি নাস্তিক হলে কি হবেন । ধর্মের লাগাম তিনি টানতে পারেন নি । লাগাম যখন টানতে পারেন নি । তখন ধর্মের সুঁড়সুঁড়ি ঠিকই দিয়ে গিয়েছেন । দেশ স্বাধীন হলো । সঙ্গে একটা অংশ ভাগও হলো ধর্মের ভিত্তিতে । তারপর সংবিধান এলো । কি এলো ? না , ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হবে ভারত । এ পর্যন্ত ঠিকি ছিল । তারপর সংবিধানে দেওয়া হল । প্রত্যেক জাতিকে ধর্ম পালনের অধিকার । এই জায়গাটায় এসে ধর্ম নিরপেক্ষতার উপরে প্রশ্ন চিহ্ন বসলো । ধর্ম পালনের অধিকার দেওয়ার পর আর একটা লাইন সংবিধানে জুড়লে বোধহয় ভাল হতো । কি সেই লাইন , ’ধর্ম যদি সমস্ত ভারতবাসির মৌলিক অধিকার পেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে । তবে রাষ্ট্র তাতে হস্তখেপ করতে পারবেন বিবেচনার সঙ্গে । ’

তাতে দেশ কুসংস্কার মুক্ত হত । রাষ্ট্র জাতিগঠনে পূর্ণ শক্তি পেতেন ।
ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে ধর্মীয় তোষণ কতটা যুক্তি সংগত মাথায় ঢুকে না ।
নেতারা ভোটার লিস্ট দেখে তোষণবাজ রাজনীতি অটুট রেখেছেন । ভারতে উন্নত নয় কারা ? কারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ? আধুনিক শিক্ষা সমস্ত ভারতীয় বাচ্চাদের জন্য ব্যর্ধতা মূলক করা হয় না কেনো ?
পারবেন না আপনি | কেননা আপনি করতে গেলেই , ধর্মীয় স্কুলের ধর্ম যাজকরা হাতে সংবিধান নিয়ে তেরে আসবেন |

আজকে যে বাচ্চাগুলো আধুনিক শিক্ষা পাচ্ছে না | তারা আধুনিক সমাজ ও আধুনিক পৃথিবী থেকে পিছিয়ে পরছে | শিক্ষাটা যেহেতু মৌলিক অধিকার তাই তারা মৌলিক অধিকার পেতে আজও বঞ্চিত | আর তাছাড়া বর্তমান ভারত ধর্মের চাপে পড়ে নাভিশ্বাসের কষ্টে জ্বলে পুড়ে মরছে । নারী অধিকার , পুরুষ অধিকার ধর্মের বেড়া জালে আলাদা আলাদা হয়ে গেছে । জাতীয় সঙ্গীত গাইতে ধর্মের কারণে আমাদের গলা রুদ্ধ হয়ে আসে ।

–নাস্তিক দেব

বুধবার, নভেম্বর ২২

হিন্দুদের দেশ ছাড়া করতে যে কৌশল নেয়া হচ্ছে দেশে

সম্প্রতি দেশে চলমান ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক হামলার পরিমাণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। গত কয়েকমাসে পরপর অনেকগুলো ঘটনা আমাদের টনক একটুও নাড়াতে পারেনি। যদি টনক নড়তোই, তবে হামলাকারীরা সাহস পেতো না। কিন্তু সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠী আগের মতোই মার খাচ্ছে, কেউ সহায় সম্বল ফেলে রেখে বা জলের দরে বিক্রি করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। আর দুর্বৃত্ত (পড়ুন জিহাদি) হামলাকারীরা তাদের সম্পত্তি দখল করার জন্য নিত্য নতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। কখনও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জিগির তুলছে, কখনও বা ডাকাতির নাম করে পেটাচ্ছে। যেন ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে তারা দেশ ছেড়ে বাঁচে।

সকালে একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে মাথাটা নুয়ে গেল লজ্জায়। এ দেশে কী হচ্ছে এসব? অপূর্ব অপু নামের একজন তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন-

সংগত কারণেই সোসাল মিডিয়াতে নিজের পরিবার অথবা ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে পারোত: পক্ষে লিখিনা বল্লেই চলে। কাল ভোর রাতে দিদির ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি উঠে বসি। আমার এ শহরে তাপমাত্রা ২/৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে বেশ কিছুদিন ধরে, তাই কম্বলের নিচ থেকে উঠে সম্বিত ফিরে পেতে একটু সময়ই লাগলো; ততোক্ষনে দিদির কল মিসড হয়ে গিয়েছে। আমি গলাটা একটু খাকারি দিয়েই কলব্যাক করি দিদিকে। ওপাশ থেকে দিদির উত্তেজিত কিছুটা কান্না মেশানো কন্ঠে বলে, “অপুরে, সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে! রামনগরে ডাকাতি করতে এসে তোর বড়মা, জেঠামশাই সবাইকে খুব মারছে, কোপাইছে!” দিদি বলেই যাচ্ছে, “কি হচ্ছে এসব দেশে, দেশে কোন আইন, বিচার নেই নাকি? মান সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা দায়! কবে থেকে বলছি ওদের ঐখান থেকে চলে আসতে, শুনছেই না! জানিস অপু তোর জেঠামশাইকে নাকি খুব মারছে, পিংকির নাকি রক্ত বন্ধ হচ্ছে না, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করছে?” আমি কিছুই বলতে পারছিনা, মূক হয়ে গেছি যেন! দিদি বুঝতে পেরে বলে, “তুই দেখ কিছু করতে পারিস কিনা!” বলেই ফোন রেখে দিলো। আমি গায়ের উপরের কম্বলটা সরিয়ে আবছা অন্ধকারে দেয়ালের দিকে তাকি থাকি। মাথার মধ্যে কতো কিছু খেলতে থাকে। রামনগর আমার মামা বাড়ী, জন্মভিটা। রাধা ডাক্তারের (দাদু) বাড়ী, পুরো বোয়ালমারীর সবাই এক ডাকে চিনতো সেই পাকিস্তান আমল থেকে। স্বাধীনতার সময় একদিনে ঐ বাড়ীর উপরে গ্রামের অন্যান্য সবার মতো আমার আত্মীয়দের সহ ২৮ জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। যুদ্ধে শহিদ হয় আমার ছোট মামা। টিকাদার মামার যুদ্ধ জয় করে আসার বীরত্বগাঁথা মা, বড়মা, দিদিমার মুখে শুনে বড় হয়েছি। কিন্তু, একজন বীর মুক্তিযাদ্ধার বোনের, স্বামী- সন্তানকে আজ রাতের আধারে বেঘোরে মার খেতে হলো কেনো? দোষটা কার? উত্তরইবা দেবে কে? প্রায় ৩ একর জায়গার উপর আমার মামা বাড়ী। বলতে গেলে পুরনো বনেদী বাগান বাড়ী। এক সময় কাচারি ঘরে মজলিস লেগেই থাকতো।পূজা পার্বনে বাড়ীর সবাই ‘মেয়ে-ছেলে’ মিলে যাত্রা-থিয়েটার করতো। লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো। দূরদুরান্ত থেকে লোক আসতো রাধা ডাক্তারের বাড়ী বলে মাথায় তুলে। যা আজ শশ্মান প্রায়। আমার জন্মের আগেই (মায়ের বিয়ের সময়) আমার টিকাদার (ডাক্তার) মামা রাগে, অভিমানে ইন্ডিয়া চলে গিয়েছিল! কারন, সেদিন রাতে যারা মুখোশ পরে ডাকাতি করতে এসেছিলো তারা নাকি মামার সাথে কাচারিতে বসে নিয়মিত তাস খেলতো। গত রাতের ঘটে যাওয়া তথা কথিত ডাকাতিও নাকি তেমনই। বড়মাকে একরুমে আটকিয়ে রাখে যাতে করে তাদের না চিনে। সবাই মিলে মুখোশ পরে নির্মমভাবে মারতেই নাকি ব্যস্ত ছিলো। দুই-চারটে মোবাইল আর নাম মাত্র কিছু সোনাদানা নিয়ে গেছে। যাবার আগে বারবার করে শাঁসিয়ে গিয়েছে, “মালাউনের বাচ্চারা বাঁচতে চাস তো তাড়াতাড়ি ভারতে যা।” বড়মার বুকের দুধ খেয়ে আমি বড় হয়েছি। কত আদর করে আমাকে বড় করেছে। বলতে গেলে রামনগরের অনেকে এখনও কনফিউস্ড আমি আসলে কার ছেলে- সুষোমার (বড়মা) না প্রমীলার (মা)। ফোনে বড়মা বেশি কথা বলতে পারেনি; বলেছে- বাবারে…ওরা তোর জেঠামশাইকে যা মারছে না…! লাঠি দিয়ে বাড়াইছে… হাঁটুতে কোপ দিয়েছে…! আমি কি বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা! জেঠামশাই পন্ডিত মানুষ, প্রায় সত্তুর ছুঁই ছুঁই করছে এখন, নামকরা একটা ইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। যারা কিনা গতোকাল রাতে তাঁর গায়ে হাত তুলেছে, তারা অথবা তার বাপ/চাচারা যদি কখন স্কুলে গিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কোন না কোনভাবে জেঠামশাইয়ের ছাত্র ছিলেন কোন সময়ে। আমার বুকের মধ্যে ক্রুদ্ধ বাস্প দলা বেধে উঠে। আমি ছটফট করতে থাকি। এর থেকে উপায় কি? এর শেষ কোথায়? উত্তর খুঁজে পাইনা। স্বাধীনতার পর থেকেই সংখ্যালঘু অথবা মালাউনদের তাড়ানোর এর থেকে সহজ উপায় তো দেখিনা। দেশে সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলতে পারার লোকজনও আজ সংখ্যালঘু প্রায়। বাংলাদেশে সৎ ও সম্মানের সাথে বাঁচতে চাওয়া লোকগুলোরও ধর্মিয় সংখ্যালঘুদের মতো অবস্থা। বাংলাদেশ আমার মতো, তাদের কাছেও এক আজীবন ‘যন্ত্রণার’ নাম। বি.দ্র:- ঐ সব থানাপুলিশ, নেতাফেতা দেখা আছে ।
এই ঘটনাগুলো চলছে, প্রতিদিনই, দেশের আনাচে কানাচে। সব খবর জাতীয় পত্রিকায় আসেও না। স্থানীয় পত্রিকায় হয়তো গুরুত্বহীনভাবে দায়সারাগোছে কিছুটা চলে আসে। অভিযোগ করারও কেউ নাই, ফলে প্রশাসনও নির্বিকার। কারন থানায় অভিযোগ না করা পর্যন্ত সে বিষয়ে মাথা ঘামানো হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে? অভিযোগ করা মানেই তো যেচে পড়ে কুড়ালে পা দিয়ে আঘাত করে আসা। তারচাইতে নীরবে দেশ ছেড়ে, সম্পত্তি ফেলে পাশ্ববর্তী দেশে তৃতীয় সারির নাগরিক হয়ে থাকাটাই তো শ্রেয়। অন্ততঃ প্রাণে বেঁচে থাকা যায় তাতে।

( BD নিউজ পোর্টাল থেকে কপি করা )

সোমবার, নভেম্বর ২০

ঝোড়ো শ্লোক

এক

তুমি যতই বাঁচার চেষ্টা কর
শেষ অবধি মৃত্যুরাই জিতবে

তুমি যতই ভালবাসার চেষ্টা কর
শেষ অবধি মায়ারাই জিতবে ।

আমি এখন মৃত্যু ও ভালবাসার
                            চিন্তা করি না
যতক্ষণ না অবধি একজন
                  মানুষ খুঁজে পাই  ।

দুই

রোদটা শিশিরে ভিজে গেছে
সকালের ভালবাসা পাখিরা
        ঠুকরে ঠুকরে রোদ খায় ।

সকাল , গাছের সামনে এসে দাঁড়ায়
শিকড় আর পাতার বিস্ময়ে
                               কেঁপে ওঠে ;
                

অভিযোগের সরল চিরকূট
হারিয়ে গেছে বন্ধু মেঘে ,
তোমাকে যতবার খুঁজতে গেছি
যাযাবর বাতাসের ঠিকানায়
ফিরে আসতে হয়েছে ততবার
আমাকে আমার অস্থায়ী ঠিকানায়..।

তিন

ঘাসে ঢাকা বুক
সবুজে গঙ্গাফড়িং

বৃদ্ধ ক্লান্ত মুখ
বাবার কাধে ঘুম

শিশুতে শিশুতে
গলছে জানালায় এসে
চাঁদিনী বরফ গলা
ফড়িংয়ের চোখ...।

ধর্ম ও চিন্তা ভাবনা

এমন একটা সময় আসবে । ধর্ম সামাজিক বিপর্যয় ঘটাবে । ধর্মটা আসলে জাতিগত অধিকারের লড়াই । একাত্ববাদ আর বহুত্ববাদের লড়াই । বর্তমান বিশ্বে ধর্মই বড় সমস্যা । যা মৌলিক জীবনকে পিছিয়ে দেবার ক্ষেত্রে ধর্ম বড় ভূমিকা নিচ্ছে । ধর্ম  মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্ব পূর্ণ ? ধার্মীকরা বলে , মানুষের চরিত্র গঠনে না-কি ধর্ম খুবই গুরুত্ব পূর্ণ ও অপরিহার্য । কিন্তু সত্যি কি তাই ? বর্তমান সমাজের সমস্ত ধর্মের ধার্মীকদের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে অনেক ক্ষেত্রেরেই তা সন্দেহ জনক । যেমন ধরুণ , ধর্ম সন্ত্রাস , দাঙ্গা , প্রার্থণালয় ভাঙ্গা , ধর্মীয় জাতিগত লুট , ধর্ষণ ও জাতিগত ভেদাভেদ ইত্যাদি । এসবই ধর্মীকদের দ্বারা সংগঠিত হয় ।

সমাজেই বা সেই সব ধর্ম কি ভূমিকা রেখেছে ? নাকি ধর্ম অনুশাসন হয়ে জেকে বসে আছে সমাজে ? আমি একটা কথা বারবার বলে থাকি , ধর্ম যদি আপনার জীবনের মৌলিক অধিকারের বাধাপ্রাপ্ত ঘটায় তবে সে ধর্ম আপনি ত্যাগ করুণ । কেননা ধর্ম একটি পুরনো রীতি নীতি । বর্তমান সময় কে ধরতে গেলে । বর্তমানকেই অনুসরণ করতে হবে । তানা হলে আজকের যুগ ও আধুনিকতা থেকে আপনাকে পিছিয়ে থাকতে হবে ।

ধর্ম কি মানুষের ক্ষুধা মেটায় ? ধর্ম কী মানুষ কে একতাবদ্ধ করায় ? না । ধর্ম পৃথক পৃথক সমাজ গঠন করে । সভত্যতা বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত ঘটায় । সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যপার হলো এই যে , এই পৃথিবী কেও পৃথক করেছে ধর্ম । মানুষের অবাধ চলাচলকে শিকল দিয়ে বেঁধেছে ।

আবার , মানুষের প্রতি ঈশ্বরেরই বা ভূমিকা কি ? আমরা তো জানি , ঈশ্বর সর্বশক্তিমান , দয়ালু ও ন্যায় বিচারক । পৃথিবীতে বহু ন্যায়-অন্যায় যুদ্ধ হয়েছে । ঈশ্বরের ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে ফলাফল জিরো আসবে । ক্ষুধার্ত্ব শিশুর শরীরে ঈশ্বর কি পুষ্টি যোগান দিতে পারেন ? নিরিহ ধর্ষিতার সহায়ক হতে পারেন ? শিশু শ্রম লাঘব করতে পারেন ? মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক সাম্য নিয়ে আসতে পারেন ? প্রশ্নবিদ্ধ ঈশ্বর নির্বেকারোই থাকবেন ।

ঈশ্বর এবং ধর্মকে এক জায়গায় নিয়ে এলে যা বুঝা যায় । তা হলো ধর্মীয় ও জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ছাড়া আর কিছু নয় । মানুষ এই একটাই মিথ্যা মিথ আঁকড়ে ধরে হাজার হাজার বছর ধরে জীবন-যাপন করছেন । সভ্যতা বিকাশের মধ্যে দিয়ে ।

                         – নাস্তিক দেব

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৬

নাস্তিক দেশ

নেদারল‍্যান্ড বিশ্বের সর্বাধিক নাস্তিকের বসবাসকারীর দেশ!!!
সে দেশে অপরাধ এত কম যে, জেলখানা পর্য‌্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে।!!!
শিক্ষিতের হার 100% !!!
জীবন যাত্রার মান সবচেয়ে উন্নত!!!

আর আমাদের উপমহাদেশ(ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্থান), এখানে অলি গলিতে পীর,সাধুবাবা,ধর্মগুরুরা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত লাল, নীল, সবুজ, গেরূয়া ঝান্ডা নিয়ে ঘোরা ফেরা ও প্রচার প্রসারে মত্ত। কিন্তু তবুও অন‍্যায়, অত‍্যাচার, দুর্নীতি, দুষ্কর্মে ভরে গেছে দেশ। এখানে শোষণ, শাষণ, নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, নিত‍্যনৈমিত্তিক ব‍্যাপার। জেলখানাগুলি সরকারী হাসপাতালগুলির গিজ গিজ করা রোগীর মত অসংখ‍্য আসামী,অপরাধীতে ভর্তি।

এত ধার্মিক আস্তিক লোকের দেশ হয়েও কেন এত অপরাধ সংঘটিত হয় এ উপমহাদেশে? কেন এত সমস‍্যা?

বোঝা যাচ্ছে আমাদের দেশে সমাজের লেখাপড়া জানা "শিক্ষিত আস্তিক" গণ-ই সমস‍্যার মূলে । যারা অন্ধবিশ্বাসী কুসংস্কারাচ্ছন্ন।

সত‍্যি কথা বলতে গেলে, নাস্তিকরা বেশী যুক্তিবাদী, উদারমনস্ক এবং মানবতাবাদী হয়ে থাকেন। কারণ এঁরা জানেন, মানেন প্রত‍্যেক কর্মের ফলাফল ও কার্য‍‌্যকারণ।।

অন‍্যদিকে আস্তিকরা কি মানে? এরা মানে জীবনে যতই পাপকর্ম, খারাপ কাজ করনা কেন, ভগবান আল্লাহ্-র শরণ নিলে, পুজা-অর্চনা-আরাধনা করলে সমস্ত পাপ ধূয়ে যায়। জীবনে অন্ততঃ একবার মক্বায় হজ বা চতুর্ধাম দর্শণ করতে পারলে তো কেল্লাফতে, সোজা স্বর্গে বা বেহেস্তে গমণ!

বুধবার, নভেম্বর ১৫

বাণী

প্রত্যেক ধার্মীক তার ধর্মমতের প্রতি দূর্বল । আর তার কারণেই  শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ।

-নাস্তিক দেব

মানুষ পরকাল কে ভেবে ঈশ্বর বিশ্বাসী ।

পরকাল যদি সত্যিই থেকে থাকে তবে ধর্ম অবমাননায় আক্রমন করা হয় কেনো ?

ঈশ্বর ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না ?

যদি উত্তর হয় “না” , তবে নাস্তিকরা কি ভাবে বাঁচে !

এই একুশ শতকে এসেও যদি ধর্মের জন্য ঘর পুড়ে ও জীবন নাশ হয় ! তবে সেই ধর্ম নিয়ে গৌরব করার কিছু কি আছে ?

ধর্ম যদি মানবতার কথা শেখাত তবে কোনো ধর্মের মানুষই অসহিষ্ণু হতো না


আত্মরক্ষক তো ঈশ্বর , তুমি আত্মরক্ষার চিন্তা করছো কেনো ।

: ঈশ্বর বিশ্বাস এখানে এসেই থেমে গেছে :

বিশ্বাস আর মূল্যবোধ এক নয় । একটা যদি মাথার উপরের আকাশ হয় । অন্যটা পায়ের তলার মাটি ।

-নাস্তিক দেব

রসগোল্লা

১৮৬৪ সালে কলকাতার নবীন চন্দ্র দাস প্রথম রসগোল্লা তৈরি করেন ।

একদিন এক ইংরেজ নবীন চন্দ্র দাসের দোকানে খেতে আসেন । দোকানে কোন মিষ্টি না থাকায় গরম চিনি রসে ছানা গোল গোল করে রসে ফেলিয়ে কিছু সময় রেখে ইংরেজ কে খেতে দেন । ইংরেজ খেয়ে প্রশংসা করেন । এই তো শুরু রসগোল্লার পথ চলা ।

বাণী

ধর্ম যদি মানব কল্যাণই বহন করবে । তবে বর্তমান বিশ্বে ধর্মের দ্বারা কি মানব কল্যাণ হয়েছে তার তালিকা প্রকাশ করুণ ।
> আশায় রইলাম <

–নাস্তিক দেব

সোমবার, নভেম্বর ১৩

মৃত্যুর আগে রামায়ণ পড়তে চাইলেন মুঘল সম্রাজ্ঞী

মৃত্যুর আগে রামায়ণ পড়তে চাইলেন মুঘল সম্রাজ্ঞী

[sb]( তাঁর নাম হামিদাবানু। হুমায়ুনের স্ত্রী, আকবরের মা। ভারতীয় মিনিয়েচার ছবির ভিত্তি ছিল এই বহুভাষিক, বহু সংস্কৃতির বহতা আদানপ্রদান। )[/sb]

উইলিয়াম ডালরিম্পল

[sb]সখী: প্রাসাদের ছাদে রাজকুমারী। তানপুরা বাজিয়ে তাঁকে কেউ গান শোনান, কেউ বা বাতাসে মুছিয়ে দেন স্বেদশ্রান্তি][/sb]

দিল্লি শহরকে কচুকাটা করে, ১৭৩৯ সালের প্রখর গ্রীষ্মে ৭০০ হাতি, ৪ হাজার উট ও ১২ হাজার ঘোড়ার পিঠে যাবতীয় ধনরত্ন বোঝাই করে পারস্যে ফিরে গেলেন নাদির শাহ। সোনাদানা, মণিমুক্তো ছাড়াও লুঠ-করা ওই ধনরত্নের মধ্যে থেকে গেল শাহজাহানের ময়ূর সিংহাসন। সেখানেই গাঁথা রয়েছে কোহিনুর হিরে ও লালরঙা তৈমুর রুবি... তৎকালীন দুনিয়ার সবচেয়ে দামি দুই রত্ন।

নাদির শাহ ইরান-আফগান সীমান্তের এক যাযাবর পশুপালকের পুত্র। সামরিক প্রতিভাবলে পারস্যের সেনাবাহিনীতে দ্রুত উত্থান, অবশেষে ১৭৩২ সালে সেখানকার সিংহাসন দখল। তার সাত বছর পরে আফগানিস্তান হয়ে, খাইবার পাস পেরিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ বন্দুকধারী সেনা নিয়ে পৌঁছলেন ভারতে। দিল্লির অনতিদূরে, হরিয়ানার কার্নালে তাঁর পথ আটকাতে তখন প্রায় দশ লক্ষ মুঘল সেনা। সংখ্যার বিচারে তারা যে কোনও মুহূর্তে নাদির শাহকে হারিয়ে দিতে পারে।

নাদির প্রথমেই মুঘল সেনাকে সরাসরি আক্রমণে প্রলুব্ধ করলেন। মুঘলরা কাছাকাছি আসতেই পারসিক সেনারা পরদা ফাঁক করার মতো দু’ভাগে সরে গেল। দেখা গেল, ঘোড়ার ওপর ‘সুইভেল গান’ নিয়ে সব পারসিক সেনা। সুইভেল গান মানে, বন্দুকটা ঘোড়ার পিঠে একটা জায়গায় রেখে, গুলি চালাতে চালাতে যে কোনও দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। অষ্টাদশ শতকের এই নতুন আবিষ্কারটি মুঘলদের হাতে ছিল না। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে সেই বন্দুক দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাল
নাদির শাহের সেনারা। কয়েক মিনিটের মধ্যে মুঘল সেনা নিথর হয়ে মাটিতে।

অতঃপর দিল্লিতে লুঠতরাজ। যাবতীয় সোনারুপো গলিয়ে, ময়ূর সিংহাসন নিয়ে স্বদেশে পাড়ি জমালেন নাদির শাহ। পুরোটা অবশ্য নিয়ে যেতে পারেননি। গ্রীষ্মশেষে সে বার প্রবল বর্ষা নামল, সোনাদানার বস্তা-বোঝাই কিছু ঘোড়া, খচ্চর ঝিলাম নদীর স্রোতে হারিয়ে গেল। হিন্দুকুশ পর্বত পেরনোর সময় আরও কিছু প্রাণী পা পিছলে খাদে পড়ে গেল। কিন্তু লুঠতরাজের বেশির ভাগ ধনরত্নই যে ভারত ছেড়ে চিরতরে চলে গেল, নির্দ্বিধায় বলা যায়।

অভিসারিকা: বর্ষার রাতে কুঞ্জবনের পথে শ্রীরাধা

নাদির শাহের এই চূড়ান্ত আঘাতই মুঘল সাম্রাজ্যকে ফোঁপরা, দেউলিয়া করে দিল। এর আগে অর্ধশতাব্দী ধরে সেই সাম্রাজ্য অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে রক্তাক্ত হচ্ছিল, কিন্তু এর পর সে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। প্রজারাও যেন মুক্তির স্বাদ পেল। ২০০ বছরের মুঘল শাসন শেষে বেশ কিছু অঞ্চলে হিন্দু রাজারা স্বাধীন হলেন।

রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চলে এল অর্থনীতি ও শিল্পের স্বাধীনতা। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি থেকেই এ সব রাজ্যে মিনিয়েচার ছবির চিত্রশালা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ১৭৩৯ সালে, নাদিরের আক্রমণের পর সেই সব রাজ্যের রাজস্ব আর দিল্লিতে পাঠানোর দরকার পড়ল না। রাজারা নতুন ভাবে স্থানীয় কেল্লা, প্রাসাদের সংস্কারে মন দিলেন, মিনিয়েচার ছবির বরাত দিলেন। ইতালির রেনেসাঁয় যেমন ফ্লোরেন্স, জেনোয়া এক একটা শহর তৈরি করেছিল শিল্পকলার নিজস্ব ভাষা, ভারতেও সে রকম ঘটল।

রাজস্থানি মিনিয়েচার ছবির আসল কথা এটাই। হিমাচল থেকে রাজস্থানের মরুভূমি, পঞ্জাবের সমতল অবধি তখন প্রায় দুই ডজন রাজপুত রাজ্য। মুঘলরা এঁদের মিত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, রাজপুত কন্যাদের বিয়েও করেছিলেন। বহু বিশ্বাস ও বহু সংস্কৃতির এই মিলন থেকেই মুঘল ও রাজপুত মিনিয়েচার ছবির সৃষ্টি।

এই মিলনধারায় কে নেই? আকবরের মা হামিদাবানু শিল্পীদের নির্দেশ দিয়ে তাঁর জন্য চিত্রিত একটি রামায়ণ তৈরি করিয়েছিলেন, মৃত্যুর আগেও সেটি পাঠ করার জন্য চেয়ে পাঠালেন। শাহজাহানের ছেলে দারাশিকো ফারসি ভাষায় ভগবদ্গীতা তরজমা করালেন। তাঁর বিশ্বাস, কোরানের ধর্মীয় সূত্রের সঙ্গে বেদ ও উপনিষদের অনেক জায়গাতেই মিল রয়েছে। আকবর বুঁদির রাজা সুর্জন সিংহকে বারাণসীতে রাজ-প্রতিনিধি করে পাঠালেন, সুর্জন সিংহ দেশে ফেরার সময় তাঁর কেল্লা ও রাজপ্রাসাদ সংস্কারের জন্য বারাণসীর মুসলমান শিল্পীদের নিয়ে এলেন। রাজস্থানের আম্বের বা মধ্যপ্রদেশের ওর্ছায় রাজপুত রাজারা দিল্লির লালকেল্লার আদলে দরবারকক্ষ তৈরি করলেন। নাদির শাহের দিল্লি আক্রমণের এক দশক আগেই আর একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। মুঘল দরবারে আগে যা হয়নি, সম্রাট মহম্মদ শাহের দরবারে সেতার ও তবলার সঙ্গতে রাধাকৃষ্ণের প্রেম নিয়ে ধ্রুপদ গেয়ে শোনানো হয়েছে। হিন্দু বনাম মুসলমান নয়, বহু সংস্কৃতির এই উজানেই মুঘল ও রাজপুত মিনিয়েচার ছবির জগৎ।

এই উজান শিল্পের। ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সাল অবধি সারা ভারত জুড়ে যখন বিভিন্ন রাজ্য প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শানাচ্ছে, তখনও রাজপুত মিনিয়েচারে যুদ্ধের কোনও প্রতিচ্ছবি নেই। সেখানে সুন্দরী মেয়েরা প্রমোদকাননের দোলনায় ঝোলে, প্রেমিক-প্রেমিকারা ঘন অরণ্যে মিলিত হয়, রাজকন্যা প্রাসাদের ছাদ থেকে বিরহাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। শৃঙ্গার রসই এই সব চিত্রকলার থিম।

মুঘল পেইন্টিং-এর থেকে রাজপুত মিনিয়েচার এখানেই আলাদা হয়ে গেল। মুঘল চিত্রকলাই ছিল উৎস, কিন্তু ছোট্ট একটা তফাত আছে। আকবর, জাহাঙ্গিরের আমল থেকে মুঘল দুনিয়া পোর্ট্রেট আঁকা, একনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ, প্রকৃতিবীক্ষণের মাধ্যমে শাসন, স্মৃতিকথা ও রাজনীতির কথা বলে। তার পাশে রাজপুত মিনিয়েচার মিথ, পুরাণ ও কবিতার কথা বলে।

উৎস একই, কিন্তু ওই যে বহু সংস্কৃতি, বহু ভাষার মিলিত স্রোত! মিনিয়েচার ছবির জগৎ মুঘলরাই প্রথম দেখিয়েছিল। কিন্তু রাজপুত চিত্রকলায় তার সঙ্গে এল ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব। রাধা-কৃষ্ণের বিরহ তো শুধু ঐশ্বরিক নয়, ভগবানের সঙ্গে মিলনের জন্য ভক্তের আর্তি। ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব জানত, ধর্ম, অর্থের পাশাপাশি কামও মোক্ষ লাভের অন্যতম বর্গ। মিনিয়েচার ছবির প্রথম ব্রিটিশ পৃষ্ঠপোষক, ঔপনিবেশিক শাসক ডব্লিউ জি আর্চার এই কথাটাই পরিষ্কার ভাবে লিখেছিলেন, ‘এই সব ছবিতে ফুল শুধুই ফুল নয়। মেঘও নয় নিছক মেঘ। মেঘ, বৃষ্টি আর বিদ্যুৎচমক এখানে প্রেমিক-প্রেমিকার আলিঙ্গনের প্রতীক।’ রাজপুত মিনিয়েচার ছবিতে তাই বজ্রবিদ্যুতের মাঝে পথ চলেন শ্রীরাধা। তাঁর পাশে ফলভারানত আমগাছ, পায়ের কাছে সাপ। দয়িতের সঙ্গে মিলনপথে, বাদলা রাতের অন্ধকারে সেই সাপও তুচ্ছ।

 

বাঙালি পাঠকের মনে পড়তে পারে বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন: শ্রাবণ মাসে ঘন ঘন বরিষে/ সেজাত সুতিআঁ একসরী নিন্দ না আইসে। …শ্রাবণ মাসে একাকিনী শয্যায় নিদ্রা আসে না। আষাঢ় মাসে নতুন মেঘের গর্জন। বড়ায়ি, এই ভরা যৌবনে কানু নিরাশ করল।

বৈষ্ণব ভাবে প্রাণিত রাজপুত মিনিয়েচার ছবিতে তাই হিন্দু বনাম মুসলমান নেই। ভারতীয় শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ এই ঐতিহ্য তৈরি হয়েছিল দুইয়ের মিলনেই। ১৭১৯ সালে মুঘল সম্রাট ফারুখশিয়র মারা গেলেন, তাঁর প্রাসাদের অন্যতম চিত্রকর ভবানীদাস দিল্লি ছেড়ে চলে এলেন জয়পুরের অনতিদূরে কিষণগড়ের রাজার কাছে। তখনকার হিসাব-বই জানাচ্ছে, মুঘল ঘরানায় প্রশিক্ষিত শিল্পীরা স্থানীয় শিল্পীদের থেকে বেশি নজরানা ও উপঢৌকন পেতেন। সংস্কৃত নন্দনতত্ত্ব জানত, শিল্পীর ধর্মের ওপর সমঝদারিত্ব নির্ভর করে না। সহৃদয় দর্শক বা পাঠকই সেখানে আসল ভোক্তা। ১৯১৬ সালে যখন হিন্দুস্তান-পাকিস্তান নিয়ে ভারত বিতর্কের মধ্যগগনে, হিন্দু ও মুসলমানেরা নিজেদের আলাদা জাতিসত্তা ভাবতে শুরু করল, সেই সময়েও নন্দনতাত্ত্বিক কুমারস্বামী জানাচ্ছেন, ‘রাজপুত মিনিয়েচার ছবির জগৎ পরাবাস্তব বা কাল্পনিক নয়, বরং শিল্পসুষমা ও চিরন্তন ভাবনার প্রকাশ। প্রেমের দৃষ্টি থেকে যাঁরা বঞ্চিত নন, তাঁরা অবশ্যই এর রসাস্বাদনে সক্ষম হবেন।’

এ সবের মধ্যেই উনিশ শতকে এল আধুনিক ফোটোগ্রাফি। লোকে তখন বক্স ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ‘বাবু, চেহারা উঠাইবেন?’ হারিয়ে গেল মিনিয়েচার ছবির সমঝদারিত্ব।

পঞ্চাশের দশকেও রাজপুত রাজারা মাত্র কয়েক হাজার ডলারের বিনিময়ে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এই সব ছবি বিক্রি করে দিয়েছেন। ইন্দিরা গাঁধীর রাজন্যভাতা বিলোপ ও নানাবিধ সমাজতান্ত্রিক কার্যকলাপের সময়টা সংগ্রাহকদের স্বর্ণযুগ। তখনই রাজস্থানের রাজপরিবারগুলি থেকে বাজারে অজস্র মিনিয়েচার বাজারে আসতে শুরু করে, দামও কমে যায়।

বিলুপ্তির কিনারে দাঁড়ানো, অন্য যুগের রাজনীতি ও নান্দনিক বোধে উজ্জীবিত রাজপুত মিনিয়েচার আজ দুনিয়ার অনন্য ঐতিহ্য।