লেখার ডাগর মাঠ


সোমবার, জুলাই ৩১

রবিবার, জুলাই ৩০

অজানা লেখক

মার্চের ছায়ায় তখন পুনর্মুদ্রন
নতুন এক হারা ঈশ্বরের ।
কামুক কান্নায় আলোর আকাশ
বড্ড বেশি আরক্ত ও উত্পেতে
লাল লালসায় ভূমিষ্ঠ হয় কবি ।

   ঈশ্বর শেষ রাতে বাম হাত বাড়িয়ে
   ভোরের পূর্ণ দৈর্ঘ্য আকাশে কালি ছিঁটায়
    শাসক আবিষ্কার করবে বলে ।
    অজানা কবির মিথ্যা দৈববাণী ।

সেখানে ছায়া উতরাই
যেখানে ভাষা-ভাষি নেই
আছে , নগ্ন নারীর দেহে
                      ঈশ্বরের ঝোঁক
উত্তেজিত ঈশ্বর ধূসর তৃণশয্যায়
জন্ম দিল মদের পাত্রে ধর্মমত
হুইস্কি এবং ভারতীয়দের......।।

বন্যা

নদী কে পোষ মানতে ,
জল বন্দি বাঁধ
তবু নদী পোষ মানে নি ,
খাঁচায় পোষা জল
সব পথ হয়ে গেছে অস্থল তরল
মহাকাশ ভরা ঋতু
অমরত্ব পায় নামহীন প্রবাহ

শুক্রবার, জুলাই ২৮

লেখার_টানে_লেখক

লেখার_টানে_লেখক
দেবজ্যোতিকাজল

আমাদের অন্তরের সৌন্দর্য প্রকাশের উপায় হলো সাহিত্য বা কবিতা । একজন লেখক সেখানে বার্তা দিবে বাক্য অনুচ্ছেদে অপর প্রান্তের মানুষকে । সেখানে থাকবে ভয় , আশা , স্বপ্ন , ভালবাসা ও ব্যক্তিত্ব । সেখানে থাকবে দর্শনীয় শব্দ ও গন্ধ ।

আমি একটা কলম ও কাগজ নিয়ে কিছু লিখব বলে ভাবছি । লেখাটার আক্ষরিতায় মিশানো থাকবে প্রতীকীবাদ । মৌলিক আর যৌগিক শব্দের সংমিশ্রন । যা হবে চিন্তার চেয়েও সহজ । আমার মনে হতাশা আছে  । অনুভব আছে । আমি যখন ভাবি । আমি আরও আরও অনেক দিন বাঁচতে নাও পারি । সেরা ব্যাপার হলো । আমি এই সত্য সত্যতার প্রতীকী ভাবনা কাউকে বলতে পারছি না । অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি আমার ভিতরে ঘটতে পারে বা ঘটাতে পারে । তাই এর একটা লেখনি রূপ আছে । সেটিই কবির কবিত্ব সত্তা । আমাকে সে সবি ভাবায় বা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় । আমার কাছে লেখাটা শুধুই শখ না । এটি আমার প্রতীকীবাদ আন্দোলন , আবেগ ও এক্সটেনশন ।

যাই হোক , আমি আমার বাস্তব জীবনের কাছে দায়বদ্ধ । এমন কি বাস্তব পরিস্থিতির কাছেও দায়বদ্ধ । আমি কখনই আমার বন্ধুদের বা অতি আত্মীয়দের সম্পর্কে , এমন কি, আমার পরিস্থিতির সম্পর্কেও অনুভব করি না যে , তাকে মনের মধ্যে সাজিয়ে রেখে মনে রাখব আজীবন । এমন কি ভবিষ্যতেও মনে থাকবে বলে মনে করি না । আমি এও মনে করি না কোন জার্নাল আমার চিন্তা ভাবনা কে ধরে রাখতে পারে । এই ক্ষেত্রে আমি আমার কর্ম-পরিকল্পনা করতে পারি লেখনির মাধ্যমে । যা সহজ ব্যাখ্যায় মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় । সে সব বিষয়গুলো হলো , আমার ভালবাসা ও আমার চরম ঘৃণার কারণগুলো । তা যতটা ছোট হোক বা বড় হোক । এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল । এই বিষয়গুলো একজন লেখকের প্রথমিক ক্লাসের হাতে খড়ি । কাগজের টুকরোয় কালির স্থাপন । যা হয়ে উঠতে পারে লেখনী ভ্রমণ ।

আমার লেখাগুলো সম্পর্কে অন্যেরা কি ভাবছে তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে না , আর তাছাড়া তা থাকার কথাও না । কারণ তারা আমার কবিতা ও সত্যের ইতিহাস জানে না । কিন্তু আমি তো জানি । আমার প্রত্যেকটি কবিতা আমার জীবনের এক একটি অংশ । এবং তার অনুভূতিগুলো অন্যদের তুলনায় আমার বোধের ক্ষমতায় অনেক ক্ষেত্রেই বেশি । তাই আমার কবিতা এবং আমার প্রকৃতি আমার লেখার খনি ।

আমি একটা দীর্ঘ সময় পার করে ভাবতেই পারি । আরও নতুন কিছু লিখতে । বিভিন্ন ধরনের কবিতা । বর্তমান , অতীত এমন কি পৃথিবী নামক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে । মানবতাবাদী ও রূপকবাদের দিকে এক ধাপ এগিয়ে । আমি লিখতেই পারি । মানুষ যেনো মানুষের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করে । যুদ্ধ করে । ধর্ম ও ধর্মমতের বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদ নিয়ে । কিন্তু এমন ভয় একজন লেখকের থাকা উচিৎ না । তার কবিতার তিক্ত সমালোচনা শুনার ব্যাপারে । যা শুনে কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ চলে যায় ।আর এই ধৈর্য ও সহনশীল । কবি প্রতিভাকে দৃঢ় করে ।

আমি হয়তো বা কখনও একজন মহান কবি হতে পারব না । কিন্তু একথা সত্য আমি লিখতে ভালবাসি । আমি আমার প্রকৃতির সত্ত্ব থেকে লিখি । আমার মানসিক চাহিদা আমাকে কলম ধরাই । শর্ত ছাড়া ।

তা হলে লেখক লিখেন কেনো ? এটা একটা নিজেকে দেখার আয়না বা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জাদু ।

বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৭

লেখার টানে লেখক


লেখার_টানে_লেখক 
দেবজ্যোতিকাজল

আমাদের অন্তরের সৌন্দর্য প্রকাশের উপায় হলো সাহিত্য বা কবিতা । একজন লেখক সেখানে বার্তা দিবে বাক্য অনুচ্ছেদে অপর প্রান্তের মানুষকে । সেখানে থাকবে ভয় , আশা , স্বপ্ন , ভালবাসা ও ব্যক্তিত্ব । সেখানে থাকবে দর্শনীয় শব্দ ও গন্ধ ।

আমি একটা কলম ও কাগজ নিয়ে কিছু লিখব বলে ভাবছি । লেখাটার আক্ষরিতায় মিশানো থাকবে প্রতীকীবাদ । মৌলিক আর যৌগিক শব্দের সংমিশ্রন । যা হবে চিন্তার চেয়েও সহজ । আমার মনে হতাশা আছে  । অনুভব আছে । আমি ভাবছিও আমি আরও আরও অনেক দিন বাঁচতে নাও পারি । সেরা ব্যপার হলো । আমি এই সত্য সত্যতার প্রতীকী ভাবনা কাউকে বলতে পারছি না । অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি আমার ভিতরে ঘটতে পারে বা ঘটাতে পারে । তাই এর একটা লেখনি রূপ আছে । সেটিই কবির কবিত্ব সত্তা । আমাকে সে সবি ভাবায় বা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় । আমার কাছে লেখাটা শুধুই শখ না । এটি আমার প্রতীকীবাদ আন্দোলন , আবেগ ও এক্সটেনশন ।

যাই হোক , আমি আমার বাস্তব জীবনের কাছে দায়বদ্ধ । এমন কি বাস্তব পরিস্থিতির কাছেও দায়বদ্ধ । আমি কখনই আমার বন্ধুদের বা অতি আত্মীয়দের সম্পর্কে , এমন কি, আমার পরিস্থিতির সম্পর্কেও অনুভব করি না যে , তাকে মনের মধ্যে সাজিয়ে রেখে মনে রাখব অজীবন । এমন কি ভবিষ্যতেও মনে থাকবে বলে মনে করি না । আমি এও মনে করি না কোন জার্নাল আমার চিন্তা ভাবনা কে ধরে রাখতে পারে । এই ক্ষেত্রে আমি আমার কর্ম-পরিকল্পনা করতে পারি লেখনির মাধ্যমে । যা সহজ ব্যাখ্যায় মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় । সে সব বিষয়গুলো হলো , আমার ভালবাসা ও আমার চরম ঘৃণার কারণগুলো । তা যতটা ছোট হোক বা বড় হোক । এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল । এই বিষয়গুলো একজন লেখকের প্রথমিক ক্লাসের হাতে খড়ি । কাগজের টুকরোয় কালির স্থাপন । যা হয়ে উঠতে পারে লেখনী ভ্রমন ।

আমার লেখাগুলো সম্পর্কে অন্যেরা কি ভাবছে তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে না , আর তাছাড়া তা থাকার কথাও না ।কারন তারা আমার কবিতা ও সত্যের ইতিহাস জানে না । কিন্তু আমি তো জানি । আমার প্রত্যেকটি কবিতা আমার জীবনের এক একটি অংশ । এবং তার অনুভূতিগুলো অন্যদের তুলনায় আমার বোধের ক্ষমতায় অনেক ক্ষেত্রেই বেশি । তাই আমার কবিতা এবং আমার প্রকৃতি আমার লেখার খনি ।

আমি একটা দীর্ঘ সময় পার করে ভাবতেই পারি । আরও নতুন কিছু লিখতে । বিভিন্ন ধরনের কবিতা । বর্তমান , অতীত এমন কি পৃথিবী নামক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে । মানবতাবাদী ও রূপকবাদের দিকে এক ধাপ এগিয়ে । আমি লিখতেই পারি । মানুষ যেনো মানুষের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করে । যুদ্ধ করে । ধর্ম ও ধর্মমতের বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদ নিয়ে । কিন্তু এমন ভয় একজন লেখকের থাকা উচিৎ না । তার কবিতার তিক্ত সমলোচনা শুনার ব্যপারে । যা শুনে কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ চলে যায় ।আর এই ধৈর্য ও সহনশীল । কবি প্রতিভাকে দৃঢ় করে । 

আমি হয়তো বা কখনও একজন মহান কবি হতে পারব না । কিন্তু একথা সত্য আমি লিখতে ভালবাসি । আমি আমার প্রকৃতির স্বত্ব থেকে লিখি । আমার মানসিক চাহিদা আমাকে কলম ধরাই । শর্ত ছাড়া ।

তা হলে লেখক লিখেন কেনো ? এটা একটা নিজেকে দেখার আয়না বা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জাদু ।

বুধবার, জুলাই ২৬

কবিতা অপহরণ

কবিতা ঘুম
দেবজ্যোতিকাজল

আমার ঘুমের স্বপ্নে দাঁড়িয়ে
কে যেনো বলল , আমার কবিতারা নদী হবে ।
                         হবে মৌমাছি নদ ।

আমায় কবিতারা দরজায় দাঁড়িয়ে বলল ,
বেঁচে থাকতে হবে নদীর মত
এক মিলিয়ন শব্দ , শব্দ , শব্দ প্রসবে

আমি ঘুমের দরজার বিরুদ্ধে , ঝুঁকে ঘুমায়
ঘরের চারপাশে অন্ধ উজ্জ্বল আলোর সকাল

আমার অনন্তকাল ভয় প্রতিভা হারাবার
কবিতা ছাড়া জীবন , জীবন নয় , স্পর্শ থমথমে
আমার দেহে জমে কবিতার দুঃস্বপ্ন বালি
প্রতিরাতে আরও গোপন স্বপ্ন ভয়-দেখি কোলাহল

আমার কবিতারা দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ বসবাসে
দুপুর দুপুর চোখে প্রত্যাশার পান্থে ।

এ আমার প্রথম রাত
প্রথম স্বপ্নের কবিতা

আমি নদীর মত বেঁচে আছি, মৌমাছি নদে
আমি একটা জলাধার চাই-
একটি কবিতা পৃষ্ঠা জুড়ে
তীরে ভাসাব লেখকের নাম ।

সব শেষে চাই ,
কবিতা মুখ জুড়ে
দু লাইনের শেষ স্তবক

এক , আমরা বেঁচে থাকতে জন্মায় নি
দুই , শুধু বাস করতেই এই পৃথিবী ।

শনিবার, জুলাই ২২

নাস্তিক দেব

♦ মানুষে তে বলে সর্ব শ্রেষ্ট জীব ,
আপনি বুকে হাত দিয়ে বলুন , আপনি কি সত্যিই সর্ব শ্রেষ্ট জীব?

♦স্রষ্টা ছাড়া যদি কোনো সৃষ্টি না হয় তবে স্রষ্টার সৃষ্টি কর্তা কে ?

♦পৃথিবীর সমস্ত জীব ও জড়ের ধর্ম নির্ধারণ করে প্রকৃতি তাই এদের পোষাকি ধর্ম নেই

♦আত্মবিশ্বাসই পারে কুসংস্কার থেকে তোমাকে মুক্তি দিতে...

♦মানবতা ও সততা মানুষের কোনো ধর্ম না,
মানবতা হলো এক ধরনের চর্চা

♦পশু’র ধর্ম আছে , তবে পোষাকি ধর্ম নেই....

♦পৃথিবীতে একমাত্র মানুষ ছাড়া আর কারু পোষাকি ধর্ম নেই...

♦ধর্ম পোষাকের মত
ইচ্ছা করলেই
পরিবর্তন করা
যায়....

♦অজ্ঞতাই কুসংস্কারের
মূল কারণ...

♦রাজনীতি আর
ধর্মের
চরিত্র এক..
আস্তিক ও নেতার চরিত্রও এক

ধর্ম মত মানুষের প্রকৃত ধর্ম-কে নষ্ট করছে ।
ধর্ম মত বর্জন করুন ।
মানবিক দূষণ বোধ করুণ

বৃহস্পতিবার, জুলাই ২০

কবিতার ভিতরে তুমি-৩

বাতাসের ঔরসে প্রসব যন্ত্রণা ,
              আমার জবুথবু একাকীত্বে
একটি স্পর্শ ছাড়া , সব স্মৃতি
                 প্রাচীন অন্ধ দ্বারে দাঁড়িয়ে ।

তোমার কষ্টগুলো এখন বড় আত্মীয় আমার
আমার জীবন বোধে তাঁরা , সত্য ও সহজ ।

বিশাল আকাশের বিষুব পথ ধরে-
                আমি নতুন মৃত্যু খুঁজি
          আহ্লাদিত জন্মান্তরে যেতে
      খুঁজে পেতে শৈশব গ্রীষ্মকাল ।

তাই......
ওখানেই আমার অস্তিত্ব
প্রতি ঘন্টা , সব সপ্তাহ
যা যত্ন করে দিয়েছি তোমায় ।

তুমি শেষ মেষ ফিরালে তা আমায় ।
                    বিষণ্ন কবিতা সন্ধ্যায় ।

           তুমি তো জানতে
           আমি তো কখনই তোমার
           প্রেমিক হতে চাই নি
           যতটা হতে চেয়েছিলাম কবি ।

কবিতার ভিতরে তুমি


এক

তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ জানলে
রাতের বাতাসে উড়িয়ে নিতাম-
                                    ঠাণ্ডা পৃথিবী
একশ উষ্ণ-কণা তোমার বিছানায়
                 ঘুমের পূর্ণতায় ছড়াতাম ।

আমি শুয়েই কাটিয়ে দিতাম ভোর বেলা চেয়ে ;
তুমি যদি বলতে, পাঁজর ছিঁড়ে প্রতীক্ষা করতাম

অথচ দুজনেরই কথা ছিল স্বপ্ন দেখার
গাছের ছায়ায় , পাতার নীচে পিঠে পিঠ রেখে ।

অসুস্থ শব্দ পাহাড়ী মেঘে ভাসে
অপেক্ষা করে কবিতা হয়ে নিবে

তুমি তো জানতে-
আমি তো কখনই তোমার
প্রেমিক  হতে চাই নি
যতটা হতে চেয়েছিলাম কবি ।

দুই

ঐ বাতাসে গন্ধ নেই
শুধু আছে পোড়া রৌদ্দুর

অনাহারী নাকে মুঠো মুঠো শ্বাস
মৃত্যুর রঙে নেই কোনো অজুহাত
যা আছে ; গভীর উৎসের পৌরানিক যাত্রা ।

ঐ বাতাসে তাই তুমি আছ
শুধু আছ অনন্ত দুপুর উত্তালে

পাখি আর পতঙ্গ উড়ে , সে নির্বেদ বাতাসে
বেগুনী গন্ধ তাই পদদলিত হয় মাটির নীচে ।

যদি ইচ্ছে হয়
ভেসে এসো বৃষ্টিহীন সংলাপে
সূর্যাস্ত নদীতে সাঁতার কেটে
কবিতার-শব্দ-বসন্ত ঝোলায় ভরে ।

তুমি তো জানতে
আমি তো কখনই তোমার
প্রেমিক হতে চাই নি 
যতটা হতে চেয়েছিলাম কবি ।

রবিবার, জুলাই ১৬

প্রতিদিন তুমি মাটির মুর্তি

খটকা

আমি যখন কবিতা লিখতে বসি
অনুভব করি আমার ভিতরে
                         কিছু একটা ঘটতে ।

আমি তখন নিজেকে বুঝে উঠতে পাবি না
আমার চামড়ার নিচে কে আগুন হয়ে জ্বলে

হঠাৎ-
একটা কবিতা এসে দাঁড়ায়
আমি ভয়ে কুকড়ে উঠি মনে

আমি তখন বুঝতে পারি
লেখার টেবিলে আমি মিসিং
তাই আমার একা বোধ গুলো
খুঁজে পায় বিস্তার অবিস্তারে ।

কিন্তু এবার ভেবেছি আমি-
অনেকটা পথ এগোব , অনেকটা
মিত্রাক্ষর কবিতার হাত ধরে হাঁটব
বহু দূর অবধি , বহু অজানা দূর ।

সকল

সব যে থেমে যাবে , ভেঙ্গে-ভাঙ্গা হবে
আলগা হয়ে সব একদিন হারিয়ে যাবে ।
তখন ,আমি তোমার শ্বাস নিব , দুঃখ নিব
কিন্তু তোমার মৃত দেহ নিতে পারব না ।

চলি

আমি তোমাকে বিদায় বলতে পারি নি
শ্রেষ্ট সময়েও বলতে পারি নি চলি ।
তোমাকে এখনি বলতে হবে বিদায়
আমি দ্বিতীয়বার বিদায় নিতে পারব না ।

বৃষ্টির উপকথা

বৃষ্টি উপকথা
দেবজ্যোতিকাজল

এখনি বৃষ্টি আসবে, একদম বেপরোয়া।

ভেসে যাবে বিবেকানন্দ রোড,
আষাঢ় গর্ভপাত মাতৃযন্ত্রণার মত,
কুকুর ভেজা বর্ষাতি আর থুবড়ীর মত।

জলের সেলফিতে দেখা যাবে ঈশ্বর ,
ঈশ্বর বড় নির্দয়,
আপন শক্তিহীন শ্রেষ্ঠ-
শূদ্র-গরিব লোক কাঁদে,
আপনার অর্জুন বিধবা পরিজনের মত
ঈশ্বর তবুও জলের সেলফিতে
গরীবের চোখ খোঁজে,
দুর্বলতা দেখে মুচকি হাসেন ।

যুবতি এসেছে-
পায়ের কব্জি ডোবা জলে দাঁড়ায়ি
অপেক্ষা করে আছে,
সে আসবে, পার্কে যাবে
পর্দা ফেলা রেস্টুডেন্টে লাঞ্চ শেষে
শক্ত হবে প্রতীক্ষা।

বৃষ্টি মাতাল হবে, নিংড়ে নিবে শরীর।

ঐ যে একজন তাকিয়ে আছে-
আড় চোখে, দ্বিতীয় বারের মত
মেয়েটিকে দেখছে-
যুবকটি তার চোখে হারায়।

মেঘে মেঘে দাঙ্গা বাঁধে
বুকের কাছে লালিত তৃষিতরক্ত বেরয় ,
যুবকটির অসভ্য নির্লজ্জ শার্টের বোতামে রক্ত দাগ।

বৃষ্টি আসে, বৃষ্টি যায়, রক্ত মুছে না।

বিবেকানন্দ রোড, অসভ্য বৃষ্টি উলঙ্গ হয়
পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষিত মেয়েটির
আত্মনাদ মেঘের সেলফিতে ।

বেশ্যাদের গলিতেও বৃষ্টি পড়ে,
তাতে বেশ্যাদের গা ঘামে,
প্রসাদনির কড়া গন্ধে
মেয়েটি প্রতীক্ষা করে
বর্ষায় ভেজা জুঁই সাদা মেঘে
কতটা বৃষ্টি হলে সে আসবে
বুঝতে পারে না।

বৃষ্টি উপকথা

এখনি বৃষ্টি আসবে , একদম বেপরয়া বৃষ্টি ।

রাস্তা ভেসে যাবে বিবেকানন্দ রোডে
আষাঢ়ে বৃষ্টি গর্ভপাত মাতৃ যন্ত্রণার মত
কুকুর ভেজা বর্ষাতি আর জামার মত

জলের সেলফিতে দেখা যাবে ঈশ্বর
ঈশ্বর বড় নির্দয় , আপনি শক্তিহীন শ্রেষ্ট শূদ্র
গরিব লোক কাঁদে ,
আপনার অর্জুন বিধবা পরিজনের মত
ঈশ্বর তবুও জলের সেলফিতে
গরীবের চোখ খোঁজে ,দুর্বলতা দেখে ।

একটি যুবতি এসে-
পায়ের কব্জি ডোবা জলে  দাঁড়ায়
অপেক্ষা হয়ে আছে , সে আসবে ,
পার্কে যাবে , কিস্ দিবে , পর্দা ফেলা রেস্টুডেন্টে লাঞ্চ হবে
তারপর জড়িয়ে ধরে বলবে , তোমাকে ভালবাসি , শক্ত হবে প্রতীক্ষা

তবু বৃষ্টি মাতাল হবে , নিংড়ে নিবে
টাইট শরীর ,
ঐ যে একজন তাকিয়ে আছে-
আড় চোখে , দ্বিতীয় বারের মত
মেয়েটিকে দেখছে

মেয়েটি কে ?
নাম কি ?
বাড়ি কোথায় ?
যুবকটি জানে না ?

যুবকটি চোখে হারায় । মেঘে মেঘে দাঙ্গা বাঁধে
বুকের কাছে লালিত কামরক্ত বেরয়
যুবকটির অসভ্য , নির্লজ্জ শার্টের বোতামে রক্ত দাগ
বৃষ্টি আসে , বৃষ্টি যায় , রক্ত মুছে না ।
বিবেকানন্দ রোড , অসভ্য বৃষ্টি উলঙ্গ হয়
পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষিত মেয়েটির
আত্মনাদ মেঘের ফেলফিতে ।

বেশ্যাদের গলিতে বৃষ্টি পড়ে ,
তাতে বেশ্যাদের গা ঘামে , আঁশটা গন্ধ
মেয়েটি তবু প্রতীক্ষা করে
বর্ষা কালের ভেজা জুঁই-এ,সাদা মেঘে
কতটা বৃষ্টি হলে সে আসবে
বুঝতে পারে না মেয়েটি ।

তাই
অজানা বৃষ্টি ফোঁটা ধরে
ভিজে যায় বৃষ্টি উপকথা

শুক্রবার, জুলাই ১৪

দীর্ঘ নৈঃশব্দ্যের পরে

দীর্ঘ নৈঃশব্দ্যের পরে
দেবজ্যোতিকাজল

এত সুদীর্ঘ সময়ের পর
আবার কথা বললে , আমি অশ্রু প্রতীক

আর এটাই সত্য
প্রায় একুশে ,

আমি তাকে ধরে রাখি-
বিকলাঙ্গ মানুষের মেঘে

ঝরে পরা অশ্রুর নীচে ।

তোমার সুসময় কোনটা বুঝতে দিবে কি ?

আমি তোমার অশরীরি
কবিতা পাঠের আয়োজন করি

মন থেকে একটা নিঃশ্বাস পালিয়ে যায় মধ্যরাতে
তার তরল ধূয়া থেকে শক্ত কামনা সে নিয়ে যাবে

নিঃশ্বাস মনটাকে বলয়ে দেবে অনন্ত সময় পর ।

আহার আমাকে আজ-কাল দাঁড়িয়ে রাখে ক্ষুধার্তে
যেনো আমি দুর্ভিক্ষ আন্দোলনের দুঃস্বপ্ন মাঠ

যদিও আমি শুধু রোমান সংখ্যার ভিতর দিয়ে হাঁটি  ।

বুঝে ওঠা সব চলে যায় ,
যে কোন অতিথির হাত ধরে ।

চলে যাওয়ার আগে দেখে নিতে চাই ,

জানলা

পর্দা

গলি-ঘুঁজি

যেনো বক্ষস্থল মন্থনের প্রথম ব্যথার মত

বয়সের প্রথম যৌন শাসন হারানোর মত

তবু চোখের মধ্যে বসে থাকে অসাধিত সেবক
                            নিদ্রালু কান্নায় ।

দীর্ঘ নৈঃশব্দ্যের পরে

এত সুদীর্ঘ সময়ের পর
আবার কথা বললে , আমি অশ্রু প্রতীক

আর এটাই সত্য
প্রায় একুশে ,

আমি তাকে ধরে রাখি-
বিকলাঙ্গ মানুষের মেঘে

ঝরে পরা অশ্রুর নীচে ।

তোমার সুসময় কোনটা বুঝতে দিবে কি ?

আমি তোমার অশরীরি
কবিতা পাঠের আয়োজন করি

মন থেকে একটা নিঃশ্বাস পালিয়ে যায় মধ্যরাতে
তার তরল ধূয়া থেকে শক্ত কামনা সে নিয়ে যাবে

নিশ্বাস মনটাকে বলয়ে দেবে অনন্ত সময় পর ।

আহার আমাকে আজ-কাল দাঁড়িয়ে রাখে ক্ষুধার্তে
যেনো আমি একটি হাংরি আন্দোলনের দুঃস্বপ্ন মাঠ

যদিও আমি কেবলমাত্র রোমান সংখ্যার ভিতর দিয়ে হাঁটি

বুঝে ওঠা সব চলে যায়
যে কোন অতিথির হাত ধরে ।

চলে যাওয়ার আগে দেখে নিতে চাই

জানলা

পর্দা

গলি-ঘুঁজি

যেনো বুকের উপর মন্থনের প্রথম ব্যথার মত

বয়সের প্রথম যৌন ইচ্ছা হারানোর মত

তবু চোখের মধ্যে বসে থাকে অসাধিত সেবক
                        নিদ্রালু কান্নায় ।

বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৩

যদি

যদি
দেবজ্যোতিকাজল

আমাদের ছোটবেলা খোঁজার চেষ্টা করি । বর্তমান  বাচ্চাদের মধ্যে। কিন্তু তা যেনো এখন অমিল হয়ে গেছে ।  আমাদের খেলাধূলা ছিল  । মাঠে- ময়দানে। মাছ ধরা, গাছে ওঠা, বৃষ্টিতে ভিজে, কাগজের নৌকা ভাসানো প্রকৃতি আর শিশু মনে  সে যেনো ছিল একাকার। কিন্তু ওরা! মানে যারা আজ বর্তমান প্রজন্ম ! যাদের কোনো শৈশব নেই । হাড়িয়ে যাচ্ছে তাদের কৈশোর । পাঠ্য বই আর আধুনিক সমাজের ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতায় । আমরা যেনো ওদের শৈশব আর কৈশোরে বেমানো । অবশ্য , সব নতুন যেমন পুরনো-কে হারায় । কাল ক্রমে একটা ভাষাই যেনো শুনতে পাই , শতাব্দীকে ঘেরে  । আর যারা বলছেন , তেনারা হলেন , ঠাকুর দার , ঠাকুর , তার ঠাকুর দা ধরে- “ কি যে যুগ পড়ল , বাচ্চা-কাচ্চারা উচ্ছন্নে গেছে । ”
হয়তো পৃথিবী দাঁড়িয়ে থাকা অবধি এভাবেই সব নতুন প্রজন্মকে তাচ্ছিল্য করা হবে ।

আমাদের শৈশব থেকে কৈশোরের আরও একটা অংশ বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে খুঁজে পায় না । যা আমরা আজও বহন করে চলছি । আমি সেই বহন করা-কে মূল্যবান বলে মনে করি । জীবন বোধ বলে মনে করি । এরজন্য আমার মা কে কৃতজ্ঞতা জানাই । সেই কত ছোটবেলায় আমার হাতে রূপকথার বই , এডভেঞ্চারের বই, ছোটদের জীবনি ও  ভূতের বই তুলে দিয়েছিল মনে নেই । কিন্তু আমাদের বাচ্চারা টিভি আর ভিডিও গেমের দৌরত্মে নজর বন্দি । তাতে মূল্যবোধের প্রশ্ন আসে । ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রশ্ন আসে । এমন কি পারিবারিক শ্রদ্ধাবোধেরও প্রশ্ন আসে । সব সময় তারা যা পছন্দ করে তাই দেখে । ইচ্ছা মত চ্যানেল চেঞ্জ করে । কখনো কার্টুন , কখনও আবার সিনেমা । সেলেবাসের বাইরের বই পড়ার সময় নেই ও মানসিকতাও নেই ওদের । তাই , আমার যদিটা আলাউদ্দিনের চেরাগে জ্বালিয়ে খুঁজি । যদি পেতাম বর্তমান প্রজন্মকে । তবে যদি  এই “যদি’র” একটা অলৌকিক রূপ পেতাম এবং আমাদের শৈশবের মত দেখতে পারতাম বর্তমান প্রজন্মকে । তবে বোধহয় বেশ ভাল লাগত । যাই হোক...

আমি ছেলেবেলায় লিও তলস্তয়ের কয়েকটা বই পড়েছিলাম । সে সব বই-এর মধ্যে বোকা ভূতের গল্পটা শৈশব হ’তে ডাকে । পড়তাম আর ভাবতাম , ইস্ যদি এমন হত সব কিছু.....সে ভূত আমায় স্বপ্নে ডাকত । আমার দিকে চেয়ে সুন্দর করে হাসি দিত । ঘুম ভেঙে যেত ।

’বোকা ভূত ' জীবনের প্রথম এই বইটা পড়া । বইটাতে একটা ভূতের বাচ্চা মানুষ হতে চায় । কি মজা তাই না ! অদ্ভূদ রকম ভাবে ভাবতাম । সত্যি যদি একটা ভূতকে মানুষ হিসেবে দেখতে পারতাম । মায়ের ভূত দেখানো ভয়টা তবে কেটে যেতো । আমার দুষ্টুমী থামানোর মহা ঔষদ ছিল মায়ের এই ভূতের কথা বলে আমাকে থামাতে । যাই হোক । এবার বোবা ভূতের কথায় আসি । ভূতটা মানুষের শিক্ষা দেখে । ভূতটারও মনে খুউব ইচ্ছা জাগে শিক্ষিত হতে । সে চায় মানুষের মত বিবেকবান হতে ; সে মানুষের ভালবাসা দেখে ভূতটা খুউব অবাক হয়ে যেতো ।তারও ইচ্ছা জাগত সবাইকে মানুষের মত ভালবাসতে । অন্যান্য ভূতের বাচ্চারা যখন মানুষকে বিরক্ত করত , তখন সে বারণ করত । এর জন্য তাকে উত্তর-মধ্যমও খেতে হত । কেউ কেউ তাকে বকা দিলে সে সুন্দর করে বোকা বোকা একটা হাসি দিত । কেউ রাগ করলে তার হাত ধরে সরি বলত । মনে মনে ভিষণ কষ্টও পেত । ভূতের বাচ্চাটা সবার কাছে বোকা হিসেবেই পরিচিত ছিল । আর এই ভাবেই সে বড় হতে থাকে.....

গল্প তো গল্পই । নিজে ভূতের কথায় ভয়  পেলেও । ভূতের বই পেলে পড়তে পড়তে মজাতে ডুবে যেতাম । আর ইচ্ছা হতো কাল্পনিক গল্পটাকে বাস্তব বানাতে । যেমন ইচ্ছা হচ্ছে , বর্তমান প্রজন্ম কে নিজের শৈশবে মিলিয়ে দিতে । কিন্তু ওরাও যে বোকা ভূতের মত বড় ইচ্ছে ।

বুধবার, জুলাই ১২

রাম মোহন

রাম মোহন রায় শংকরাচার্যের অবিদ্যা অর্থাৎ অসত্যজ্ঞান এবং মায়া অর্থাৎ অসত্য বাস্তবএর তত্ত্ব কে স্বীকার করেন নি ।

রাম ম একেশ্বরবাদী বিশ্বাসী ছিলেন

★সমাজের মূল স্রোতের বিরুদ্ধে তাঁর এই ভূমিকার জন্য তাঁর আত্মীয় -পরিজন থেকে বিচ্ছিন্নও হয়েছিল এবং তাঁর নিজস্ব বিবরণ অনুযায়ী একমাত্র দুই-তিনজন স্কট বন্ধুই তাঁকে বর্জন করেছিল ।

★রাম ম বলেছিল , আরেকটা কুসংস্কার গ্রহন করার জন্য তিনি একটি কুসংস্কার বর্জন করেননি ।
যখন সবাই ভেবেছিল রাম মোহন বোধহয় খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহন করেছেন ।  তখন এই কথাগুলো বলেছিল

★তিনি কোনো ধর্মগুরু ও ধর্মশাস্ত্রকে অভ্রান্ত মনে করতেন না । ধর্মের ও ধর্মগুরুদের অলৌকিক ক্রিয়াকর্মকে অবিশ্বাস করতেন । হিন্দু ধর্মের মুর্তি পুজাকে তিনি নিন্দা করতেন ।বহু দেব দেবির কল্পনাকে তিনি ভ্রান্ত বলতেন । আবার সঙ্গে সঙ্গে মুর্তি পুজকদের নির্যাতন এবং হত্যা করবার ইসলামীয় অনুশাসনের সমলোচনা করতেন ।

★তার নিজের বক্তব্য,’ আমার সমস্ত বিতর্কে আমি যে অবস্থান গ্রহন করেছি তা ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে নয় , কিন্তু এর বিকৃতির বিরুদ্ধে ।’

★তিনি নিজে সমুদ্র যাত্রা করার সাহস দেখিয়ে হিন্দুধর্মের নিষেধাজ্ঞাকেই অগ্রাহ্য করেন ।

★ ইংলণ্ডের জন ডিগবীকে রাম মোহন রায় চিঠিতে লিখেছিলেন , ক্রটি-বিচ্যূতির দিক থেকে হিন্দু ইউরোপ বা আমেরিকার সাধরণ খ্রিস্টান সমাজ থেকে অধিক খারাপ কিছু নয় । কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতএ হচ্ছে যে , হিন্দুরা বর্তমান যে ধর্মীয় প্রথা আঁকড়ে ধরে চলছে তা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ পুষ্ট করতে পারবে না । জাত পাত ভেদাভেদ তাদের অসংখ্য বিভাজন করছে তা তাদের দেশ প্রেমিক মনোভাব থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করে রেখেছে ।

----------------------------------------------
তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আধুনিক এক ভারতের। দেশের মানুষকে অতীতমুখী, মধ্যযুগীয় মানসিকতার গণ্ডি থেকে বের করে এনে এক নতুন যুগের জীবন দর্শনের আলো দেখানোই ছিল উদ্দেশ্য। তবু, তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য তৎকালীন হিন্দু পণ্ডিতসমাজ তাঁকে ‘পাষণ্ড’, ‘ম্লেচ্ছ’, ‘বকধূর্ত’, ‘কাপটিক’, কিংবা ‘নগরান্তবাসী’ নামে সম্বোধন করেছিলেন। এমনকী, এক সময় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের গোঁড়া, ধর্মান্ধ, অসহিষ্ণু কিছু মানুষ তাঁর প্রাণনাশেরও চেষ্টা করেছিল। সে জন্য তাঁকে কম হেনস্থাও হতে হয়নি।কঠোর জীবন সংগ্রামের মধ্যে রামমোহন হয়ে উঠেছিলেন ঊনবিংশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম এক নায়ক। ১৭৭২-এর ২২ মে, হুগলি জেলার রাধানগরে তাঁর জন্ম। পালপাড়া গ্রামের নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার বা হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী কৈশোরেই রামমোহনের মধ্যে আধ্যাত্মিক চিন্তার বীজ রোপন করেছিলেন। পরে পটনায় আরবি এবং কাশীতে সংস্কৃত শিক্ষা লাভ করেন।

আনুমানিক ১৮০৩-০৪ সালে রামমোহন মুর্শিদাবাদ গিয়েছিলেন। সেখানেই আরবি ও ফারসি ভাষায় একেশ্বরবাদ বিষয়ে তাঁর প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘তুহফাৎ উল মুবাহ‌্‌হিদ্দীন’।

রামমোহনই প্রথম বাঙালি তথা ভারতীয় মনীষী যিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের আড়ালে থাকা জ্ঞানবিজ্ঞান এবং নানা প্রকার প্রয়োগবিদ্যার বৃহৎ সভ্যতা এ দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। যদিও ব্রিটিশদের শোষণনীতি তিনি কখনও সমর্থন করেননি। সথীদাহ প্রথা আইনত বন্ধ করার জন্য রামমোহন বদ্ধপরিকর হয়েছিলেন। সতীদাহ নিয়ে চূড়ান্ত বিতর্ক বিবাদের ফলে তৎকালীন রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ ক্রমেই রামমোহনের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছিল। ১৮৩০-এর ১৭ জুন, সংস্কৃত কলেজে এক সভায় হিন্দুধর্ম রক্ষার জন্য রাজা রাধাকান্ত দেব, রামকমল সেন, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ রক্ষণশীল নেতৃবর্গ ‘ধর্মসভা’-র পত্তন করেছিলেন।
ইতিমধ্যেই রামমোহনের ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে তাঁকে কেন্দ্র করেই একটি মিত্রগোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল। ১৮১৫-তে তাঁদের নিয়েই প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ‘আত্মীয় সভা’। প্রতি সপ্তাহে এক দিন এর অধিবেশন হত বিভিন্ন সদস্যদের বাড়িতে।

বিশেষ উল্লেখযোগ্য ১৮১৬-তে এই সভারই এক অধিবেশনে ডেভিড হেয়ার হিন্দু কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব রাখেন। আর যে গোষ্ঠীটি আত্মীয় সভাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ১৮২৮-এ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার পরে তা আরও উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছিল। তবে এই সভার সকলে কিন্তু রামমোহনের মতো সংস্কার বিষয়ে মুক্তমনা ছিলেন না। ‘আত্মীয় সভা’-য় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সমালোচনা হতেই বেশ কিছু সদস্য এর সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেছিলেন। তবে দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, রমানাথ ঠাকুর, হরিহর দত্ত, মথুরানাথ মল্লিক, কালীনাথ রায়চৌধুরী প্রমুখ এই আন্দোলনে রামমোহনকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন করেছিলেন। এ ছাড়াও ডিরোজিওর তরুণ শিষ্যরা রামমোহনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তবে রামমোহন পরিণত বয়সে ব্যক্তিগত জীবনে খুবই নিঃসঙ্গ ছিলেন। তাঁর ছিল দুই পুত্র, রাধাপ্রসাদ ও রমাপ্রসাদ।
ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে নিজ খরচে তিনি অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এ ছাড়াও ইংরেজি ভাষায় হিন্দুধর্মের প্রতিশব্দ ‘হিন্দুইজম’ শব্দটি তাঁরই সৃষ্টি।
ব্রিস্টলে ১৮৩৩-এর ২৭ সেপ্টেম্বর রাজা রামমোহনের মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ৬২ বছর বয়সে। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ আজও পরিষ্কার নয়। মৃত্যুর দশ বছর পরে দ্বারকানাথ ঠাকুর তাঁর সমাধির উপর একটি সুদৃশ্য স্মৃতি সৌধ তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন।