লেখার ডাগর মাঠ


শনিবার, আগস্ট ৮

RSS ও বিজেপি বনাম রবি ঠাকুর


ধর্মের বিকারেই গ্রীস মরিয়াছে , ধর্মের বিকারেই রোম লুপ্ত হইয়াছে । এবং আমাদের দূর্গতির কারণ ধর্মের মধ্যে ছাড়া আর কোথাও নেই । 

                                    - রবি ঠাকুর

বিজেপি কাল " আমার পরিবার" শিরোনামে রবি ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস পালন করছিল । মঞ্চ থেকে শ্লোগান আসছিল , “ রবি ঠাকুরের আদর্শ দিকে দিকে ছড়িয়ে দাও ।" আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছিল । এ যেনো ভূতের মুখে রাম নাম । যারা বিভাজন ছাড়া রাজনীতি করতে জানে না তারা নাকি রবি ঠাকুরের আদর্শ দিকে দিকে ছড়িয়ে দিবে ! ওরে কে আসিস বিজেপি নেতাদের জিজ্ঞেস কর , ওদের হিন্দুত্ববাদ মানে কি ? ধর্ম মানে কি ? আপনি কি এতদিন হিন্দু ছিলেন না ! এরা বলার পর , আপনার মনে হলো ,আপনি হিন্দু ! কি আশ্চার্য স্ববিরোধী কথা মাইরি ।

আবার কিছু rss-এর আবালেরাও কাল রবি ঠাকুরকে নিয়ে মেতেছিল । RSS মানে কি সকলেই জানে । কাকের লেজে ময়ূর পুচ্ছ লাগিয়ে এই পশ্চিমবঙ্গের কিছু মানুষ আরএসএস পন্থীরা ময়ুর সাজার ভান ধরেছে । যাদের মুখে খিস্তি খেওরী ছাড়া ভাষা নেই , তারা নাকি রবি ঠাকুরের আদর্শ খুঁজচ্ছে । আমার ধারণা কোন শিক্ষিত ও রুচীশীল মানুষ আরএসএস করতে পারে না । জ্ঞানী মানুষ তো নোইই ।

বাঙালী হিন্দুরা এদের বিশ্বাস করলে ভুল করবে । এরা দলিতদের শত্রু । এরা শূদ্রদের শত্রু । এরা উপজাতিদের শত্রু । আপনারা কি চান আবার ধর্মের কারণে নির্যাতিত হতে ? আর এই নির্যাতনের ফলে আবার শত শত হিন্দু ধর্মান্তরিত হোক । আপনারা কি চান সমাজ চলুক ধর্মের কল কাঠিতে ? যদি না চান , তবে সাবধান হওয়ার সময় এসে গেছে ।   এরা চায় পুরনো ভারতকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে । এরা চাই ভারত আবার এক শ্রেনীর হাতে শোষণ হোক । ভারতের যে উদরতার সংবিধান এরা তাকে কলঙ্ক করতে চায় ।

আর.এস.এস ও বিজেপি বনাম রবি ঠাকুর

ধর্মের বিকারেই গ্রীস মরিয়াছে , ধর্মের বিকারেই রোম লুপ্ত হইয়াছে । এবং আমাদের দূর্গতির কারণ ধর্মের মধ্যে ছাড়া আর কোথাও নেই । 

                                    - রবি ঠাকুর

বিজেপি কাল " আমার পরিবার" শিরোনামে রবি ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস পালন করছিল । মঞ্চ থেকে শ্লোগান আসছিল , “ রবি ঠাকুরের আদর্শ দিকে দিকে ছড়িয়ে দাও ।" আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছিল । এ যেনো ভূতের মুখে রাম নাম । যারা বিভাজন ছাড়া রাজনীতি করতে জানে না তারা নাকি রবি ঠাকুরের আদর্শ দিকে দিকে ছড়িয়ে দিবে ! ওরে কে আসিস বিজেপি নেতাদের জিজ্ঞেস কর , ওদের হিন্দুত্ববাদ মানে কি ? ধর্ম মানে কি ? আপনি কি এতদিন হিন্দু ছিলেন না ! এরা বলার পর , আপনার মনে হলো ,আপনি হিন্দু ! কি আশ্চার্য স্ববিরোধী কথা মাইরি ।

আবার কিছু rss-এর আবালেরাও কাল রবি ঠাকুরকে নিয়ে মেতেছিল । RSS মানে কি সকলেই জানে । কাকের লেজে ময়ূর পুচ্ছ লাগিয়ে এই পশ্চিমবঙ্গের কিছু মানুষ আরএসএস পন্থীরা ময়ুর সাজার ভান ধরেছে । যাদের মুখে খিস্তি খেওরী ছাড়া ভাষা নেই , তারা নাকি রবি ঠাকুরের আদর্শ খুঁজচ্ছে । আমার ধারণা কোন শিক্ষিত ও রুচীশীল মানুষ আরএসএস করতে পারে না । জ্ঞানী মানুষ তো নোইই ।

বাঙালী হিন্দুরা এদের বিশ্বাস করলে ভুল করবে । এরা দলিতদের শত্রু । এরা শূদ্রদের শত্রু । এরা উপজাতিদের শত্রু । আপনারা কি চান আবার ধর্মের কারণে নির্যাতিত হতে ? আর এই নির্যাতনের ফলে আবার শত শত হিন্দু ধর্মান্তরিত হোক । আপনারা কি চান সমাজ চলুক ধর্মের কল কাঠিতে ? যদি না চান , তবে সাবধান হওয়ার সময় এসে গেছে ।   এরা চায় পুরনো ভারতকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে । এরা চাই ভারত আবার এক শ্রেনীর হাতে শোষণ হোক । ভারতের যে উদরতার সংবিধান এরা তাকে কলঙ্ক করতে চায় ।

অস্পৃশ্য শব্দটা আমাকে দুঃখ দেই



আমার বাড়ির পাশের পাড়াটির নাম ছিল তাম্বুলী পাড়া । তাম্বুলী তাদের বলে যারা পান খাওয়ার চুন বানায় । তাম্বুলী পাড়ায় আমার চার পাঁচজন বন্ধু ছিল । তারা আমার একদম পারানের বন্ধু ছিল । তারমধ্যে গোপীও ( সামাজিক কারণে নাম পরিবর্তন করা হল ) ছিল আমার বন্ধু । গোপী ব্রাহ্মণ পরিবারে মানুষ ।তার শিক্ষা-দীক্ষা থেকে সব কিছু চালাত সেই ব্রাহ্মণ পরিবারটি । ব্রাহ্মণ পরিবারটির যিনি কর্তী ছিলেন , তেঁনাকে গোপী মা বলে ডাকতেন । সমস্যাটা এখানে ছিল না । গোপীর টাইটেলটি ছিল সেই পরিবারের সমস্যা । গোপী তাম্বুলী ছিল ।  গোপীর সব ঘরের বিচরণে আমরা বুঝতে পারতাম না । গোপীকে খেতে দিত রান্না গরের বান্দায় । গোপীর শরীর এতটা অপবিত্র । সেই ছোট্ট বয়সে আমি বুঝতাম না । গোপীকে আমরা কখনও সেই বামুন পরিবারের রান্না ঘরে খেতে দেখি নি । রান্না ঘরে যদি গোপীর কিছুর প্রয়োজন হতো । রান্নাঘরের বাইরে গোগী দাঁড়িয়ে থাকত , বাড়ির কেউ একজন তা বের করে দিত । আমি ভাবতাম কারণটা কি ? গোপীর নিজের বাড়ির রান্না ঘরে ঢুকতে পারে না কেনো ? গোপী যে অস্পৃশ্যদের দলে সেটি বোঝার মত জ্ঞান বুদ্ধি আমার কোনটাই ছিল না । তবে বুঝতে পারতাম কোথাও একটা গণ্ডগোল আছে । ব্যপারটা যখন বুঝলাম ও জানতে পারলাম ভীতরে ভিতরে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম । হুম গোপী , দিনু , মৃণাল এরা সবাই ছিল অস্পরশ্যতার দলে । এমন কি আমার অতি ছোট বেলার বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বাডিতেও তাদের একটা গণ্ডি টানা ছিল । বাড়ির লোকদের অবহেলায় আমি বিরক্ত প্রকাশও করতাম । কেননা একটা সময় আমি যখন অসুস্থ হয়ে বিছায় পরে থাকি তারাই ছিল আমার বেঁচে থাকার রসদ । এরা আমার বন্ধু । এরপর আর কোন কথা থাকতে পারে না । গোপী যাকে মা ডাকে , আমি যার ছোটবেলার বন্ধু সেখানে তাম্বুলী হওয়ার কারণে লক্ষ্মণ রেখা টানা হবে এ আমি মন থেকে মেনে নিতে পারতাম না । আজও দিনগুলোর কথা মনে পড়লে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পায় । এদের জন্য কিছু করতে ইচ্ছা করে । ভেঙে ফেলতে মন চায় ধর্মের বেড়া কাঠি । শুধু ধর্মের কারণে সে বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও কেনো আমার সমাজে অবহেলিত হবে । গোপীকে আমি আমার বাড়িতে আসতে বলেছি । ও আসবে বলেও বলেছে । গোপী যদি সত্যিই আমার এখানে আসে ,ইচ্ছা আছে আমার রান্না ঘরে বসিয়ে দুজনে মিলে ভাত খাব । এক বিছায় শুয়ে পুরনো সময়ের গল্প করব । জানতে চাইব , ঠাকুর বাড়ির রান্না ঘরে তোকে ঢুকতে দেয় কি না এখনও । যদি গোপী উত্তরে না বলে । তবে গোপীকে বলব , ঠাকুর বাড়ির কর্তীকে তুই আর মা বলে ডাকিস না । রক্তের সম্পর্ক ছাড়া মায়ের মর্য্যদা হয় না । তুই তার জ্বলন্ত প্রমান ।

বুধবার, আগস্ট ৫

অস্পৃশ্যতা কি জন্মগত ?

অস্পৃস্যতা কি জন্মগত ?

অনেক হিন্দুকে ঈশ্বর আছে কি নেই এই প্রশ্নে আসলেই তারা একটা যুক্তি দিয়ে থাকেন , সেটি হলো , “ঈশ্বর যদি নাই থাকত তবে সারা বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ ঈশ্বরের উপসনা করত না ।” খুব ভাল কথা , যদি তাই হয় তবে আপনার সমাজে 10% ব্রাহ্মণ থাকলেও 60% শূদ্র আছে । তবে ব্রাহ্মণদের থেকে শূদ্রদের আধিপত্ত বেশি থাকবে না কেনো ? শূদ্ররা কেনো অস্পৃস্য তকমা নিয়ে এই সমাজে বাঁচবেন ? তার কোন সৎ উত্তর এই গাণ্ডু হিন্দুদের কাছ থেকে পায় না ।

আবার গীতার বর্ণপ্রথার কথা উঠলে এরা বুঝাতে চায় যে , গীতায় নাকি কর্মের ভিত্তিতে জাতি প্রথার কথা বলেছে , জন্মগত ভাবে জাতিপ্রথার কথা বলেনি । বেশ মানলাম । আপনি যা বলছেন , সঠিক । আপনার পাশের বাড়িটি যদি কোন ব্রাহ্মণ জেঠু বা দাদু বাড়ি হয় তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুণ তো । যা ভাবছেন বা যা বললেন তা ঠিক কি না ? আমি হলফ করে বলতে পারি । আপনি যা শুনবেন তাতে আপনি আহত হবেন । আপনি কি কখনও শুনেছেন , কোন ধর্মগুরু মুচী ও মেথর পরিবারের কাউকে কৃষ্ণমন্ত্র দিতে ? না , হয়তো শুনেনি । কেনো শুনেনি জানেন , ঐ মনুসংহীতা আর গীতা যায় বলুন , সেখানে জন্ম সূত্রেই জাতি প্রথার কথা বলা হয়েছে । বৈদিকযুগে এই জাতিপ্রথার এত বাঁধা নিষেধ না থাকলেও , অথর্ববেদের শেষ সময় থেকে জাতিপ্রথার চরম বাঁধা নিষেধ শুরু হতে থাকে । ব্রাহ্মণ শাসন কালে তা চরমে পৌঁছে যায় । সেসব ইতিহাস আজ কলঙ্কিত ইতিহাস । যাই হোক ।

 আর একটা কথা, আপনারা কখনও কি দেখেছেন মেথর ও মুচীদেরকে দেব মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় কি-না ? আমি যতটা জানি এদের মন্দিরের বারান্দা অবধি উঠার অনুমতি আছে । কিন্তু ভীতরে ঢুকার অনুমতি নেই ।  তারপর নিউজ পেপারে পাত্র-পাত্রীর সংবাদে যা দেখি তা কি ভুল ? না । 

এরা ধর্মের সম্পর্কে কিছু না জানলেও । এরা ধর্মের নিন্দা শুনতে চায় না । এদের তাতে নাকি লড্জাবোধ হয় । এরা কানে যা শুনে সেটিই বিশ্বাস করে । পড়তে এদের সময় নেই । এরা এক একটা কর্ণজ্ঞানের বিদ্যান । আবার এরা মনে করে ধর্মে কখনও ভুল থাকতে পারে ? অপদার্থতার একটা সীমা থাকে কিন্তু এদের ভিতরে তাও নেই । আরে গর্দভ ধর্মে যদি ভুল নাই বা থাকবে তবে সতীদাহ প্রথা , গঙ্গায় সন্তান বিসর্জন প্রথাগুলো উঠল কি করে তবে ? 

 আমি প্রচুর হিন্দু যুবকদের সঙ্গে হিন্দু ধর্ম নিয়ে আলোচনায় জড়িয়েছি । বিশ্বাস করুণ , নিজ ধর্মের অ আ জ্ঞানটুকু তাদের মধ্যে নেই । তারা পুরোপুরি গবেটমার্কা নিজ ধর্ম জ্ঞানে  । তাই বলি , আসুন , একটা পুরো সমাজকে পাল্টাতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে । নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে । বিজ্ঞান কি তা বুঝতে হবে । কিসে নিজ সমাজের কল্যান হয় তাহা সমাজে প্রয়োগ করতে হবে । তবেই উঠবে জাতিপ্রথা , সতীদাহ প্রথার মত । তবেই আমরা পাব একটা উন্নত জাতি । হিন্দু জাতি হোক বিজ্ঞানময় জাতি ।

                   -নাস্তিক দেব

মঙ্গলবার, আগস্ট ৪

ধর্ম কি ?

মানুষের ধর্ম অবশ্যই আছে । সেটি কিন্তু সৃষ্টিগত । সেটি কখনই কেউ পরিবর্তন করতে পারে না । আমরণ অবধি তা মানুষ ধারণ করে থাকে । মানুষের বৈশিষ্ট ,গুণ ও প্রকৃতি মানুষের ধর্ম ।  যেমন , জল ,আগুন ও চম্বুক তার ধর্ম পরিবর্তন করতে পারে না , ঠিক তেমনই ।

মানবতা মানুষের ধর্ম না । কেননা মানবতা চর্চার দ্বারা একজন মানুষ অর্জন করে । ধর্ম কখনও চর্চার দ্বারা অর্জন করা যায় না । ইহা জন্ম লগ্ন থেকেই স্বয়ম্ভূ । তাই মানবতা মানুষে নীতিবোধ ।  নীতিবোধ কখনই ধর্ম হতে পারে না ।