লেখার ডাগর মাঠ


সোমবার, অক্টোবর ২

গাঁধীজি

#গান্ধী_থেকে_মহাত্মা_না_হওয়ার_কিছু_পর্যায়

আফ্রিকার কিংবদন্তী, বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, “মহাত্মা গান্ধীর কৌশলগুলো দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতিবিদ্বেষ ছড়ানো ও বিভক্তি সৃষ্টিতে সহায়তা করেছিল!”

অন্যদিকে ইথিওপিয়ার সম্রাট প্রথম হাইলি সিলাসি মহাত্মা গান্ধীর প্রশংসা করে বলেছিলেন, “যারা স্বাধীনভাবে ও ন্যায়ের সঙ্গে বাঁচতে ভালোবাসেন তারা মহাত্মা গান্ধীকে সবসময় স্মরণ করবেন। সব আফ্রিকান নেতাই যে ভারতের জাতির জনকের কাছ থেকে স্বাধীনতায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন এমন নয়।”

এই হলো বিখ্যাত “সত্যগ্রহ” আন্দোলনের অহিংসবাদী নেতার বিষয়ে দুই বিপরীতমুখি মূল্যায়ন। এমন বিতর্ক ভারতেও কম নয়।

এবার নতুন বিতর্কের জালে পড়লেন গান্ধী। সম্প্রতি ঘানার রাজধানী আক্রার একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি উঠেছে। এই দাবিতে এক হাজার মানুষের স্বাক্ষরিত একটি অনলাইন পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। এই আন্দোলনের শুরুটা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ঘানার অধ্যাপকরা। তারা বলছেন, বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি ও অহিংস আন্দোলনের জনক গান্ধী জনসাধারণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। কিন্তু তার একটি “বর্ণবাদী পরিচয়” রয়েছে!

পিটিশনে তারা মহাত্মা গান্ধীর একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন। যেখানে আফ্রিকানদের “বর্বর বা নেটিভ আফ্রিকা” ও “কাফ্রি”(শব্দটি কালো আফ্রিকানদের অপমান করতে ব্যবহৃত হয়) হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

১৮৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নাটাল পার্লামেন্টের উদ্দেশে লিখিত গান্ধীর একটি চিঠিকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন তারা। যেখানে গান্ধী লিখেছেন, “সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেতে ভারতীয়রা বর্বর বা নেটিভ আফ্রিকানদের চেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল।”

এসব উদ্ধৃতি একটি অনলাইন উৎস থেকে সংগৃহীত। এই সোর্সটি গান্ধীর উক্তি সংগ্রহ ও পরিবেশন করে থাকে।

পিটিশনকারীরা বলছেন, ঐতিহাসিকরা কীভাবে গান্ধীর সম্পর্কে শিক্ষা দেবেন ও ব্যাখ্যা করবেন, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল নির্দয়। এমন লোককে আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে মহিমান্বিত করছি?

চলতি বছরের জুনে ঘানা সফরকালে রাজধানী আক্রায় একটি প্রতিষ্ঠানে গান্ধীর মূর্তি উন্মোচন করেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি । সেই মূর্তিটি সরিয়ে ফেলার এই দাবি উঠেছে। এ নিয়ে ঘানায় ব্যাপক বিতর্ক চলছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় আইনজীবী হিসেবে গান্ধী
পিটিশনে স্বাক্ষরকারী ইউনিভার্সিটি অব ঘানার একজন সাবেক শিক্ষার্থী ড্যানিয়েল ওসেই তুফুর বলেন, “ঘানাবাসীদের নিজ দেশের বীরদের সম্মানের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত, গান্ধীর কার্যক্রমে শান্তিপূর্ণ কিছু নেই। যিনি শান্তি ও সম্প্রীতি সমুন্নত রাখার দাবি করেছেন তিনিই আবার বর্ণবাদকে উৎসাহিত করছেন। এটা এক ধরনের ভণ্ডামী।”

অবশ্য কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের বিষয়ে গান্ধীর বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। গান্ধীর নাতি ও আত্মজীবনী রচনাকারী রাজমোহন গান্ধী জানান, আইন বিষয়ে অনুশীলন করতে ২৪ বছর বয়সে তার দাদা প্রথম আফ্রিকা ভ্রমণে যান। সন্দেহাতীতভাবে ওই সময় তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষদের সম্পর্কে অজানা ও পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, গান্ধী নিজেও একজন অসম্পূর্ণ মানুষ, এই অসম্পূর্ণ গান্ধী কট্টর এবং একই সাথে তার সমকালীনদের চেয়ে প্রগতিশীল ছিলেন।

তবে পিটিশনকারীরা বলছেন, “দিন শেষে আমরা নিজেদের চেহারা দেখতে চাই, যে আমাদের বর্বর বলে ডাকত তার চেহারা নয়। আফ্রিকা যদি প্রতিবাদী হয়ে ওঠে তবে গান্ধীর ভাস্কর্য হয়তো অপসারিত হবে।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন