লেখার ডাগর মাঠ


মঙ্গলবার, জানুয়ারী ২

অস্তর্নিহিত কথকোপথন

 

অস্তর্নিহিত কথকোপথন
দেবজ্যোতিকাজল

আজ রাস্তায় অন্ধ একজোড়া কবিতা কুড়িয়ে পেলাম । পাথর নুড়িতে । পাথর নুড়িটা ঠাণ্ডা স্পর্শে কুড়িয়ে নিতেই । রাস্তা কেঁদে উঠল খেদে । এই মাত্র তার স্বজন । তার বুকে পায়ের চিহ্নে ঝড় তুলে দিয়ে চলে গেল । কবিতা আর কলমেরা মরা ফুলের মত মুখ করে । আকাশ আর বাতাসের গতিতে হাত বুলিয়ে ঈশারা করল আমায়  । মেঘেরা তৎক্ষণে থমকে দাঁড়িয়েছে । ওই পাহারি বৃক্ষের মগ ডালে । বড়ই নির্জন শুনশান  । ওরা দু’জনই জন্মগত একাকী । আমার মধ্যে সংকট তৈরি করছে ওরা । নীরবতা ওদের যন্ত্রের সঁকেট । হাসলে মনে হয় তিরস্কার ।

আমায় বলল ওরা , “আমাদের খিদেরা গরিব হয়ে গেছে ।”

আমি ওদের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম , “ বড়লোকদের চোখে তোরা পরজন্মে জন্মাস । তখন খিদেরা জ্যোৎস্না হবে । ”

ওরা বলল , “ আমাদের গরিব খিদেরা এখন খিদে পেলেই কবিতাদের শব্দ খায় । ” তারপর একটু থেমে আবাক চোখে তাকিয়ে বলল , “ তুমি কি কবি ?”

আমি বললাম ,” আমি কবি । তবে ! কবিতার জন্মান্তরবাদ ।”

ওরা বলল , “ যাহ্ তাই আবার হয় না-কি ! তা হলে , তুমি কি শব্দ ?”

আমি বললাম , “ না । আমি ব্যঞ্জনবর্ণের সহায়ক শব্দমুঞ্জরী । আমি অনুভূতের সুখ আর দুখের আ-কার , উ-কার । শব্দের প্রেমিক-প্রেমিকা , ঝড়-বৃষ্টি বাদল ।”

ওরা এক সঙ্গে বলে উঠল ,“ আমাদের ত্বকে তুমি কি দেখছো ?”

আমি টানা নিশ্বাস নিয়ে বললাম , “ কাব্য অণুলিপি ।”

তারপর চোখ খুলে দেখি । একটা জোড়া নিপীড়ন হাসির ধুলো । আস্তে আস্তে মিলে গেলো চোখের সাদাংশে । সামনে কেউ নেই । আছে শুধু একদীঘি রৌদ্দুর । আর এক গাছ দূরত্ব । পায়ে কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । ওদের উপস্থিতির রামধনুর পঞ্চম রং । আমি ক্ষুধা আর কবিতার প্রতিবেশি হয়ে । বসত স্থাপন করি ওদের বুকের মাঝে । নদীর জলে ভাসিয়ে দেই আমার অনুভূতি । আমার কুড়িয়ে পাওয়া অন্ধ একজোড়া কবিতারা কেঁদে ওঠে বলল ,“ আর কত যন্ত্রণা ! এই বুকের বসত বাড়িতে গৃহ পালিত করে লালন-পালন করব । কবিতা , তার চেয়ে- তুমি মেঘ হয়ে ওড়ে যাও সুখ সারির দেশে । ”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন