লেখার ডাগর মাঠ


শনিবার, জানুয়ারী ১৩

ইচ্ছা পুরণের ভাষা


ইচ্ছে পুরণের ভাষা
দেবজ্যোতিকাজল

ছোটবেলায় কাদা মাটি দিয়ে পিরামিড বানাতাম । পাড়ার এক দাদুর কাছে যেনেছিলাম পিরামিডে মরা মানুষ ভূত হয়ে বসবাস করে । আমি অবশ্য কখনই বিশ্বাস করতাম না ভূত-টূত বলে কিছু আছে । মানুষ কোনো এক কারণে মারা জান । পিরামিড বানাতে বানাতে ভাবতাম । আরও ভাবতাম বড় হলে আমি বিজ্ঞানী হব । মানুষ মারা গেলেই তাদের আমি বাঁচিয়ে তুলব । ওয়ান থেকে টু । টু থেকে থ্রী । আমার জীবনের পরিবর্তন ঘটতে লাগল । আমি যত বড় হতে লাগলাম । বিজ্ঞানী হবার ইচ্ছাটা ততই ভিতরে দানা বাঁধতে লাগল । ভাবতাম সারা পৃথিবীর একটি মানুষকেও আমি মরতে দেব না । আমি তখনও অবদি জানতাম না বিজ্ঞানী কি করে হতে হয় । আমি ভাবতাম এই কাদা মাটির পিরামিড বানাতে বানাতেই একদিন বিজ্ঞানী হয়ে যাব ।

আমি বড় হতে হতে একদিন জানলাম । বিজ্ঞানী হতে গেলে প্রচুর বই পড়তে হয় । আমার পাশের বাড়ির এক মাস্টামোশার বাড়ি গিয়ে দেখি । আলমারি ভর্তি বই । ইংরাজি ও বাংলায় লেখার প্রচুর বই ।

মাস্টামোশাইকে জীঞ্জেস করলাম , এটা কি বই ?

মাস্টামোশাই উত্তর দিলেন , এটা মানুষ কেমন করে পৃথিবীতে এলো সেই নিয়ে বই ।

বইটা হাতে নিয়ে দেখলাম ইংরাজিতে লেখা । মনে মনে ভাবলাম দুর আমি তো ইংরাজি পড়তেই পারি না । পাশের আলমারি থেকে আরও একটা বই বের করলাম । বইটা বাংলাতেই লেখা । কভার পেজে বড় বড় করে লেখা আছে শরৎ রচনা বলি । বইটা তাকে রেখে মাস্টামোশার দিকে তাকালাম । মাস্টামোশা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল , কি হয়েছে রে ? হঠাৎ বই-এর পিছনে কেন লাগলি ।

আমি করুণ আর নরম স্বরে বললাম , বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের লেখা বই পড়ব ।

মাস্টামোশাই বলল, ওসব বই তো সব ইংরাজিতে লেখা ।

মনে মনে ভাবলাম । তবে কি হবে ! আমার বিজ্ঞানী হবার । আমি কি তবে পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে বাঁচাতে পারব না ? না , আজও এতটা বড় হয়েও বিজ্ঞানী হতে পারিনি । বিজ্ঞান বিষয়ের বইগুলো যে সব ইংরাজিতে লেখা । আমার স্বপ্নের পিরামিড আর বিজ্ঞানী হবার লুপ্ত বাসনা আস্তে আস্তে ইচ্ছাদের ডানায় উড়ে নিরুদ্দেশ হতে লাগল । মানুষ মরে । প্রতিদিন মরে । হয়তো আমিও একদিন মরে যাব । তবুও আমার বিজ্ঞানী হওয়া হবে না । আমার মাতৃভাষায় আমি কাঁদি হাসি , খিদে পেলে মাকে বলি । বড় জোড় কাউকে খিস্তি দেওয়া যায় । কিন্তু বিজ্ঞান চর্চা করা যায় না ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন