লেখার ডাগর মাঠ


বৃহস্পতিবার, জুলাই ১৩

যদি

যদি
দেবজ্যোতিকাজল

আমাদের ছোটবেলা খোঁজার চেষ্টা করি । বর্তমান  বাচ্চাদের মধ্যে। কিন্তু তা যেনো এখন অমিল হয়ে গেছে ।  আমাদের খেলাধূলা ছিল  । মাঠে- ময়দানে। মাছ ধরা, গাছে ওঠা, বৃষ্টিতে ভিজে, কাগজের নৌকা ভাসানো প্রকৃতি আর শিশু মনে  সে যেনো ছিল একাকার। কিন্তু ওরা! মানে যারা আজ বর্তমান প্রজন্ম ! যাদের কোনো শৈশব নেই । হাড়িয়ে যাচ্ছে তাদের কৈশোর । পাঠ্য বই আর আধুনিক সমাজের ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতায় । আমরা যেনো ওদের শৈশব আর কৈশোরে বেমানো । অবশ্য , সব নতুন যেমন পুরনো-কে হারায় । কাল ক্রমে একটা ভাষাই যেনো শুনতে পাই , শতাব্দীকে ঘেরে  । আর যারা বলছেন , তেনারা হলেন , ঠাকুর দার , ঠাকুর , তার ঠাকুর দা ধরে- “ কি যে যুগ পড়ল , বাচ্চা-কাচ্চারা উচ্ছন্নে গেছে । ”
হয়তো পৃথিবী দাঁড়িয়ে থাকা অবধি এভাবেই সব নতুন প্রজন্মকে তাচ্ছিল্য করা হবে ।

আমাদের শৈশব থেকে কৈশোরের আরও একটা অংশ বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে খুঁজে পায় না । যা আমরা আজও বহন করে চলছি । আমি সেই বহন করা-কে মূল্যবান বলে মনে করি । জীবন বোধ বলে মনে করি । এরজন্য আমার মা কে কৃতজ্ঞতা জানাই । সেই কত ছোটবেলায় আমার হাতে রূপকথার বই , এডভেঞ্চারের বই, ছোটদের জীবনি ও  ভূতের বই তুলে দিয়েছিল মনে নেই । কিন্তু আমাদের বাচ্চারা টিভি আর ভিডিও গেমের দৌরত্মে নজর বন্দি । তাতে মূল্যবোধের প্রশ্ন আসে । ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রশ্ন আসে । এমন কি পারিবারিক শ্রদ্ধাবোধেরও প্রশ্ন আসে । সব সময় তারা যা পছন্দ করে তাই দেখে । ইচ্ছা মত চ্যানেল চেঞ্জ করে । কখনো কার্টুন , কখনও আবার সিনেমা । সেলেবাসের বাইরের বই পড়ার সময় নেই ও মানসিকতাও নেই ওদের । তাই , আমার যদিটা আলাউদ্দিনের চেরাগে জ্বালিয়ে খুঁজি । যদি পেতাম বর্তমান প্রজন্মকে । তবে যদি  এই “যদি’র” একটা অলৌকিক রূপ পেতাম এবং আমাদের শৈশবের মত দেখতে পারতাম বর্তমান প্রজন্মকে । তবে বোধহয় বেশ ভাল লাগত । যাই হোক...

আমি ছেলেবেলায় লিও তলস্তয়ের কয়েকটা বই পড়েছিলাম । সে সব বই-এর মধ্যে বোকা ভূতের গল্পটা শৈশব হ’তে ডাকে । পড়তাম আর ভাবতাম , ইস্ যদি এমন হত সব কিছু.....সে ভূত আমায় স্বপ্নে ডাকত । আমার দিকে চেয়ে সুন্দর করে হাসি দিত । ঘুম ভেঙে যেত ।

’বোকা ভূত ' জীবনের প্রথম এই বইটা পড়া । বইটাতে একটা ভূতের বাচ্চা মানুষ হতে চায় । কি মজা তাই না ! অদ্ভূদ রকম ভাবে ভাবতাম । সত্যি যদি একটা ভূতকে মানুষ হিসেবে দেখতে পারতাম । মায়ের ভূত দেখানো ভয়টা তবে কেটে যেতো । আমার দুষ্টুমী থামানোর মহা ঔষদ ছিল মায়ের এই ভূতের কথা বলে আমাকে থামাতে । যাই হোক । এবার বোবা ভূতের কথায় আসি । ভূতটা মানুষের শিক্ষা দেখে । ভূতটারও মনে খুউব ইচ্ছা জাগে শিক্ষিত হতে । সে চায় মানুষের মত বিবেকবান হতে ; সে মানুষের ভালবাসা দেখে ভূতটা খুউব অবাক হয়ে যেতো ।তারও ইচ্ছা জাগত সবাইকে মানুষের মত ভালবাসতে । অন্যান্য ভূতের বাচ্চারা যখন মানুষকে বিরক্ত করত , তখন সে বারণ করত । এর জন্য তাকে উত্তর-মধ্যমও খেতে হত । কেউ কেউ তাকে বকা দিলে সে সুন্দর করে বোকা বোকা একটা হাসি দিত । কেউ রাগ করলে তার হাত ধরে সরি বলত । মনে মনে ভিষণ কষ্টও পেত । ভূতের বাচ্চাটা সবার কাছে বোকা হিসেবেই পরিচিত ছিল । আর এই ভাবেই সে বড় হতে থাকে.....

গল্প তো গল্পই । নিজে ভূতের কথায় ভয়  পেলেও । ভূতের বই পেলে পড়তে পড়তে মজাতে ডুবে যেতাম । আর ইচ্ছা হতো কাল্পনিক গল্পটাকে বাস্তব বানাতে । যেমন ইচ্ছা হচ্ছে , বর্তমান প্রজন্ম কে নিজের শৈশবে মিলিয়ে দিতে । কিন্তু ওরাও যে বোকা ভূতের মত বড় ইচ্ছে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন