লেখার ডাগর মাঠ


বুধবার, জুলাই ১২

রাম মোহন

রাম মোহন রায় শংকরাচার্যের অবিদ্যা অর্থাৎ অসত্যজ্ঞান এবং মায়া অর্থাৎ অসত্য বাস্তবএর তত্ত্ব কে স্বীকার করেন নি ।

রাম ম একেশ্বরবাদী বিশ্বাসী ছিলেন

★সমাজের মূল স্রোতের বিরুদ্ধে তাঁর এই ভূমিকার জন্য তাঁর আত্মীয় -পরিজন থেকে বিচ্ছিন্নও হয়েছিল এবং তাঁর নিজস্ব বিবরণ অনুযায়ী একমাত্র দুই-তিনজন স্কট বন্ধুই তাঁকে বর্জন করেছিল ।

★রাম ম বলেছিল , আরেকটা কুসংস্কার গ্রহন করার জন্য তিনি একটি কুসংস্কার বর্জন করেননি ।
যখন সবাই ভেবেছিল রাম মোহন বোধহয় খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহন করেছেন ।  তখন এই কথাগুলো বলেছিল

★তিনি কোনো ধর্মগুরু ও ধর্মশাস্ত্রকে অভ্রান্ত মনে করতেন না । ধর্মের ও ধর্মগুরুদের অলৌকিক ক্রিয়াকর্মকে অবিশ্বাস করতেন । হিন্দু ধর্মের মুর্তি পুজাকে তিনি নিন্দা করতেন ।বহু দেব দেবির কল্পনাকে তিনি ভ্রান্ত বলতেন । আবার সঙ্গে সঙ্গে মুর্তি পুজকদের নির্যাতন এবং হত্যা করবার ইসলামীয় অনুশাসনের সমলোচনা করতেন ।

★তার নিজের বক্তব্য,’ আমার সমস্ত বিতর্কে আমি যে অবস্থান গ্রহন করেছি তা ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে নয় , কিন্তু এর বিকৃতির বিরুদ্ধে ।’

★তিনি নিজে সমুদ্র যাত্রা করার সাহস দেখিয়ে হিন্দুধর্মের নিষেধাজ্ঞাকেই অগ্রাহ্য করেন ।

★ ইংলণ্ডের জন ডিগবীকে রাম মোহন রায় চিঠিতে লিখেছিলেন , ক্রটি-বিচ্যূতির দিক থেকে হিন্দু ইউরোপ বা আমেরিকার সাধরণ খ্রিস্টান সমাজ থেকে অধিক খারাপ কিছু নয় । কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতএ হচ্ছে যে , হিন্দুরা বর্তমান যে ধর্মীয় প্রথা আঁকড়ে ধরে চলছে তা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ পুষ্ট করতে পারবে না । জাত পাত ভেদাভেদ তাদের অসংখ্য বিভাজন করছে তা তাদের দেশ প্রেমিক মনোভাব থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করে রেখেছে ।

----------------------------------------------
তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আধুনিক এক ভারতের। দেশের মানুষকে অতীতমুখী, মধ্যযুগীয় মানসিকতার গণ্ডি থেকে বের করে এনে এক নতুন যুগের জীবন দর্শনের আলো দেখানোই ছিল উদ্দেশ্য। তবু, তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য তৎকালীন হিন্দু পণ্ডিতসমাজ তাঁকে ‘পাষণ্ড’, ‘ম্লেচ্ছ’, ‘বকধূর্ত’, ‘কাপটিক’, কিংবা ‘নগরান্তবাসী’ নামে সম্বোধন করেছিলেন। এমনকী, এক সময় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের গোঁড়া, ধর্মান্ধ, অসহিষ্ণু কিছু মানুষ তাঁর প্রাণনাশেরও চেষ্টা করেছিল। সে জন্য তাঁকে কম হেনস্থাও হতে হয়নি।কঠোর জীবন সংগ্রামের মধ্যে রামমোহন হয়ে উঠেছিলেন ঊনবিংশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম এক নায়ক। ১৭৭২-এর ২২ মে, হুগলি জেলার রাধানগরে তাঁর জন্ম। পালপাড়া গ্রামের নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার বা হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী কৈশোরেই রামমোহনের মধ্যে আধ্যাত্মিক চিন্তার বীজ রোপন করেছিলেন। পরে পটনায় আরবি এবং কাশীতে সংস্কৃত শিক্ষা লাভ করেন।

আনুমানিক ১৮০৩-০৪ সালে রামমোহন মুর্শিদাবাদ গিয়েছিলেন। সেখানেই আরবি ও ফারসি ভাষায় একেশ্বরবাদ বিষয়ে তাঁর প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘তুহফাৎ উল মুবাহ‌্‌হিদ্দীন’।

রামমোহনই প্রথম বাঙালি তথা ভারতীয় মনীষী যিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের আড়ালে থাকা জ্ঞানবিজ্ঞান এবং নানা প্রকার প্রয়োগবিদ্যার বৃহৎ সভ্যতা এ দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। যদিও ব্রিটিশদের শোষণনীতি তিনি কখনও সমর্থন করেননি। সথীদাহ প্রথা আইনত বন্ধ করার জন্য রামমোহন বদ্ধপরিকর হয়েছিলেন। সতীদাহ নিয়ে চূড়ান্ত বিতর্ক বিবাদের ফলে তৎকালীন রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ ক্রমেই রামমোহনের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছিল। ১৮৩০-এর ১৭ জুন, সংস্কৃত কলেজে এক সভায় হিন্দুধর্ম রক্ষার জন্য রাজা রাধাকান্ত দেব, রামকমল সেন, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ রক্ষণশীল নেতৃবর্গ ‘ধর্মসভা’-র পত্তন করেছিলেন।
ইতিমধ্যেই রামমোহনের ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে তাঁকে কেন্দ্র করেই একটি মিত্রগোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল। ১৮১৫-তে তাঁদের নিয়েই প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ‘আত্মীয় সভা’। প্রতি সপ্তাহে এক দিন এর অধিবেশন হত বিভিন্ন সদস্যদের বাড়িতে।

বিশেষ উল্লেখযোগ্য ১৮১৬-তে এই সভারই এক অধিবেশনে ডেভিড হেয়ার হিন্দু কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব রাখেন। আর যে গোষ্ঠীটি আত্মীয় সভাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ১৮২৮-এ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার পরে তা আরও উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছিল। তবে এই সভার সকলে কিন্তু রামমোহনের মতো সংস্কার বিষয়ে মুক্তমনা ছিলেন না। ‘আত্মীয় সভা’-য় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সমালোচনা হতেই বেশ কিছু সদস্য এর সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেছিলেন। তবে দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, রমানাথ ঠাকুর, হরিহর দত্ত, মথুরানাথ মল্লিক, কালীনাথ রায়চৌধুরী প্রমুখ এই আন্দোলনে রামমোহনকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন করেছিলেন। এ ছাড়াও ডিরোজিওর তরুণ শিষ্যরা রামমোহনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তবে রামমোহন পরিণত বয়সে ব্যক্তিগত জীবনে খুবই নিঃসঙ্গ ছিলেন। তাঁর ছিল দুই পুত্র, রাধাপ্রসাদ ও রমাপ্রসাদ।
ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে নিজ খরচে তিনি অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল স্থাপন করেছিলেন। এ ছাড়াও ইংরেজি ভাষায় হিন্দুধর্মের প্রতিশব্দ ‘হিন্দুইজম’ শব্দটি তাঁরই সৃষ্টি।
ব্রিস্টলে ১৮৩৩-এর ২৭ সেপ্টেম্বর রাজা রামমোহনের মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ৬২ বছর বয়সে। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ আজও পরিষ্কার নয়। মৃত্যুর দশ বছর পরে দ্বারকানাথ ঠাকুর তাঁর সমাধির উপর একটি সুদৃশ্য স্মৃতি সৌধ তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন