লেখার ডাগর মাঠ


শনিবার, মে ৬

আমার কথা

২০০১ সাল । অবসর পেলেই প্রবীর ঘোষ ও বিভিন্ন ধর্মীয় বই ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে পড়ছি । আর একটা গ্রাম্য সামাজিক জীবনের সাথে বেখাপ্পা জীবনের দোলা চলে ধর্মের বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে মানুষের মধ্যে দিয়ে উত্তর চাইছি । উত্তর পাচ্ছি । কিন্তু নানান ব্যক্তির নানান রকম উত্তর পাচ্ছি । না । জুত সই উত্তর পাচ্ছি না । প্রতি উত্তর দিলেই বেধে যাচ্ছে তর্ক । বই নিয়ে এসে দেখালেও যে কোনো অজুহাত দিয়ে নিজের বলা কথাকে সত্যি বলে চালানোর চেষ্টা করছে । হঠাৎ একদিন আত্মা নিয়ে আলোচনায় জানতে পারলাম বিদেশে কোনও এক বিজ্ঞানী মৃত প্রায় ব্যক্তিকে কাঁচের বাক্সে রেখে পরীক্ষা করেছে । ব্যক্তিটি মারা যাবার কিছু পরে কাঁচের বাক্সটা ফেটে আত্মাটা বেরিয়ে যায় । তাতে নাকি প্রমান হয়েছে আত্মা নামে কিছু একটা আছে । তারপর আত্মা নিয়ে বিভিন্ন বই পড়তে লাগলাম । তাতে আমি আরও বিভ্রান্তি হতে লাগলাম । কেননা এক একেক ধর্মগুরু আত্মা সম্পর্কে একেক রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন ।
তখন ছিল বর্ষা কাল । সবে মাত্র বৃষ্টি কমেছে । হঠাৎ সাপ ব্যাঙ ধরলে যেমন আওয়াজ হয় বারান্দার দাওয়ায়ের কাছে শব্দ হতে লাগল । আমি ঘরে থেকে টর্চ নিয়ে দেখি , একটা ছুঁচা ছোট একটা ব্যাঙ ধরেছে । ব্যাঙটা মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে আর ও রকম আওয়াজ করছে । আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্যপারটা উপভোগ করছিলাম । সেই মূহুর্তে হঠাৎ সেই আত্মা সম্পর্কের ব্যাখ্যা টা মনে পড়ে গেল । রাত শেষ হয়ে সকাল হলো । ছাত্ররা পড়তে এলো । কিন্তু রাতের ঘটনাটা আমার মাথার মধ্যে খোঁচা দিতে লাগল । আমারই এক ছাত্র কে বললাম , আমাকে বড় দেখে একটা ব্যাঙ ধরে দিতে পারবি ?

ছাত্রটি আমার কথায় রাজি হয়ে গেল । আমি পড়ানো শেষ করে বাজারে গিয়ে একটা ছোট দেখে কাঁচের বয়াম কিনলাম আর একটা ছিদ্র বিহীন প্লাস্টিকের ব্যাগ সংগ্রহ করলাম । ছাত্রটি বিকেলের দিকে ইয়া বড় একটা ব্যাঙ নিয়ে এসে দিয়ে গেল । আমি ব্যাঙটাকে ব্যাগটার মধ্যে রেখে দিয়ে । মাকে বললাম , আড়াই শোর মত আটা মাখ । মা আটা মেখে দেওয়ার পর । আমি ব্যাঙটাকে বয়ামের মধ্যে তুললাম । তারপর আটা মাখা দিয়ে বয়ামের মুখটাকে ভাল করে আটকে দিলাম । এরপর প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে বয়ামটা তুলে আগুনের তাপ দিয়ে জোড়া লাগিয়ে আমার ঘরের খাটের নীচে রাখলাম ।

তিনদিন পর জল ভর্তি বড় বালতির মধ্যে বয়ামটা ডুবিয়ে দিয়ে প্লাস্টিকে চাপ দিলাম । না কোন ভুড়ভুড়ি বেরচ্ছে না । তার মানে ব্যাঙটি মরেছে ঠিকি কিন্তু তার আত্মা ? না । তার কোন সত উত্তর পেলাম না । বয়ামটি আরও সাতদিন পর একই ভাবে পরীক্ষা করলাম । রেজাল্ট ? ঐ একই আসল । শেষমেষ ব্যাঙটিকে আমি কংকালে পরিনত করে রেখেছিলাম ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন