লেখার ডাগর মাঠ


মঙ্গলবার, মে ৯

রবীন্দ্র নাথকে বুর্জয়া বলেন কমিউনিস্টরা..

"আর পাঁচজনের মতই শুনে আসা। বামপন্থীরা রবীন্দ্রনাথকে বুর্জয়া কবি বলেছিলেন। বামপন্থীদের আক্রমণ করার মোক্ষম অস্ত্র। কিন্তু, দলের কোন আলোচনায় এই রকম সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল? পক্ষে-বিপক্ষে মতামত কি ছিল? ‘মেলে না উত্তর।’
কার্যত এটা কোন দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। মানে কমিউনিস্ট পার্টিতে যেমন হয়। ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নয়, আলোচনার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত (ভুল হোক বা ঠিক হোক) গৃহীত হয়।
*রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া বলেন কমিউনিস্ট নেতা ভবানী সেন। ‘রবীন্দ্র গুপ্ত’ ছদ্মনামে। বিশ শতকের চল্লিশের দশকের একেবারে শেষদিকে। যদিও এটা ভবানী সেনের ব্যক্তিগত মুল্যায়ন। তবু দলের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ দেখা দেয়। ভবানী বাবু তাঁর ভুল উপল্বদ্ধি করে তা সংশোধন করেন।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ৩-১২ নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে রবীন্দ্রনাথ শান্তি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যার মূল উদ্যক্তা বামপন্থীরা। এই মেলার উদ্বোধক ছিলেন রবীন্দ্রনাথের কন্যা মীরা দেবী। এই অনুষ্ঠানে আসেন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বোস, জে বি এস হল্ডেন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ,সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, সোভিয়েত ইউনিয়নের সুরকার বালাসানিয়ান, কিউবার নর্তকী এ.এলিশিয়া।বাংলার আদিবাসী লোকশিল্পীদল এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের মজুর শিল্পীরাও মর্যাদার সাথে তাদের নৈপুণ্য প্রকাশ করে। কবি সম্মেলনে যোগদান করে কালিদাস রায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক থেকে শতাধিক কবি। এপার – ওপার দুই বাংলার কবিরা তো ছিলই সেই সাথে ছিল উর্দু কবিদের মুশায়েরা। উত্তরপ্রদেশের নিরক্ষর কবি রামখেরের কবিতা এবং ভারতের বিভিন্ন ভাষার কবির কবিতা পাঠ ও আবৃত্তির আয়োজন করা হয়।
কমিউনিস্ট পার্টির প্রকাশনা ‘ ন্যাশনাল বুক এজেন্সি ‘ থেকে গোপাল হালদারের সম্পাদনায় প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হয় যার লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন হীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। হীরেন্দ্রনাথ মুখপাধ্যায় লেখেন ‘Himself a true poem’.
সি.পি.এম এর অনেক প্রবীণ নেতাই সেদিনকার এই মেলার সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
এই মেলা বর্জন করেছিল কারা? আনন্দবাজার পত্রিকা।
**১৯২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর কবি নজরুল ইসলাম, মুজফফর আহমেদ(কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য) ও তাদের সহযোগীরা ‘লাঙল’ পত্রিকা প্রকাশে উদ্যোগী হন তখন ঠিক হয় রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাণী চাওয়া হবে। সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখছেন—“ রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে ‘লাঙলের’ জন্য আশীর্বচন যোগাড় এর ভার পড়ল আমার উপর।একদিন সকালবেলা রবীন্দ্রনাথের কাছে পেশ করলুম আমাদের আর্জি। তিনি তৎক্ষণাৎ লিখে দিলেন---- জাগো, জাগো বলরাম, ধরো তব মরুভাঙ্গা হল /প্রাণ দাও , শক্তি দাও, স্তব্ধ করো ব্যর্থ কোলাহল।
‘লাঙলে’র প্রচ্ছদপটে তাঁর ঐ আশীর্বচন থাকত।”
ঐ লাঙল পত্রিকা প্রকাশের সূত্রে কমিউনিস্টরা জোড়াসাঁকোর বাড়ি ও কিছুটা রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে আসেন। পশ্চিমবঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক সরোজ মুখোপাধ্যায় ১৯৮৩, ২১ জানুয়ারী ‘দেশহিতৈষী’ পত্রিকায় লেখেন--- ‘ জোড়াসাঁকোর বাড়িতে নিচের তলায় নেপু ঠাকুরের ঘর ছিল তদানীন্তন কমিউনিস্ট পার্টির গোপন কেন্দ্র। সে ঘরে কমরেড হালিমের সাথে আমি বহুবার গেছি। সোমনাথ লাহিড়ীও যেতেন, রণেন সেনও যেতেন। আব্দুল হালিমের সঙ্গে আমি ছ’সাতবার ওখানে রবীন্দ্রনাথের সাথে আলাপ আলোচনার সুযোগ পেয়েছিলাম। আব্দুল হালিম বীরভূমের মানুষ—তাঁকে রবীন্দ্রনাথ বিশেষ স্নেহ করতেন। তাই আমাদের আলাপ ভালোই জমত। একবার আমরা তাঁর তীব্র সমালোচনা করে বললাম – আপনার ‘রাশিয়ার চিঠি’র কয়েক জায়গা আমাদের ভালো লাগে নি। আমরা “সর্বহারার দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’” শীর্ষক একটা পুস্তিকা প্রকাশ করছি। তিনি বললেন, তা তোমরা কর , কিন্তু মোটামুটি ভালো চিঠি লিখি নি? আমি তো আর তোমাদের মত কমিউনিস্ট নই। আমরা বলি ঠিকই তো, আপনি যা লিখেছেন তাতে তো দারুণ কাজ হয়েছে, সোভিয়েতের বিরুদ্ধে যা অপপ্রচার চলছে তাঁর মোক্ষম জবাব আপনি দিয়েছেন।”
----- #সংগৃহীত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন