লেখার ডাগর মাঠ


বৃহস্পতিবার, মার্চ ২

টারকোয়েজ শার্ট

কিছুদিন আগে পর্যন্ত পরিবারের সদস্য ছিল পাঁচ । বাবা-মা , প্রতিম-পিউ ও ঠাম্মা । প্রতিমের মা মারা যাবার পর সংসারটা ছোটো হতে থাকে । পিউ ছিল , প্রতিমের ছয় বছরের বড়ো । তাই পিউ-এর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর সংসারটা আরও ছোটো হয়ে যায় ।

প্রতিমের বয়স যখন ষোলো । তখন তার মা এক-অজানা রোগে মারা জান । প্রায় বিনা চিকিৎসায় প্রতিমের মা চলে জান । বিনা চিকিৎসা মানে চিকিৎসা  করার সুযোগ পাননি ।

প্রতিম এখন কলেজে পড়ে । মা হারা ছেলেটা এখন বড়োই আনকন্সার্নড । ড্রেস-পোষাক থেকে নিজের প্রতিও অগোছালো । কোনও স্মার্টনেস নেই । কোনও চাকচিক্ক নেই । প্রতিমের প্রতি ঠাম্মার ভূমিকাও যৎ-সামান্য । আশি ছুঁইছুঁই তার ঠাম্মার । তাই প্রতিম আপ-টু-ডেট নয় । অনেকটাই আজ-কালকার ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে । প্রতিমের গুন বলতে একটাই তা হলো লেখা পড়া । মা’রও ইচ্ছা ছিল প্রতিম ডাক্তার হবে । তাই সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে । কলেজের সেরা ছাত্র সে । মিথ নামে একটি মেয়ে প্রতিমকে ভালবাসে । প্রেম-ট্রেম প্রতিমের নো ইন্টারেস্টিং । তবুও কেনও জানি মিথকেও তার ভাল লাগে ।

প্রতিম এক রাতে গাছের সঙ্গে গাছের বিয়ের স্বপ্ন দেখেছিল । কি যেনো গাছ ? হ্যাঁ মনে পড়েছে । বট গাছের সঙ্গে পাঁকুড় গাছের বিয়ে । স্বপ্নটা এখনও মাঝে মাঝে দেখে প্রতিম । সে এ সব বিশ্বাস করে না । তবুও কোন একদিন এই স্বপ্ন দেখেই মিথ কে ভালবাসার সঙ্গী করে পেয়েছিল । ভালবাসা পেলে ছেলেদের জীবনে রঙ লাগে । আয়নাতে বারবার মুখ দেখে । প্রতিদিনের পোশাকে রঙ লাগে । অভ্যাস বদ-অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে । কিন্তু প্রতিম ঠিক তার উল্টো । একদম অযত্নবান । পরনে কালো রঙের টিশার্ট ঝুলে হালকা নেভিব্লু জিন্স । মাসের পর মাস কলেজে প্রতিমের সেই একই পোশাক । মিথ প্রতিমের পোশাক-আশাকে যথেষ্ট বিরক্ত হয় । মিথ প্রতিমকে কিছু বলতেও পারে না । বান্ধবীরাও মিথের আড়ালে প্রতিমকে নিয়ে কথা বলে । কেনো প্রতিম ডেলি একি পোশাক পড়ে আসে  । দু একটা কথা এর জন্য মিথের কান অবদিও পৌঁছায় । মিথ একবার ভেবেও ছিল প্রতিমকে কথাটা বলবে । প্রতিম কষ্ট পাবে ভেবে কথাটা আর বলা হয়নি ।

তাই একদিন মিথ প্রতিম কে সহজ গলায় বলল ,“ তোমার কি রঙ পছন্দ ?”

প্রতিম চোখ বন্ধ করে বলল , “ কালো ।”

মিথ আবারও অবাক সুরে বলল ,“ শুধু কালো ! আর কোনো রঙ !”

প্রতিম মিথের কথার উত্তর না দিয়ে বলল ,“ তোমার পছন্দের রঙ কি ?”

মিথ জড়ানো গলায় বলল ,“ বেগুনী , লাল আর টারকোয়েজ ।”

প্রতিম হাল্কা হেসে ,মিথের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল ,“ টারকোয়েজটা আমারও পছন্দ ।”

প্রতিমের কথা শেষ হতে না হতেই হড়বড়িয়ে মিথ বলল,“ তবে যে বললে শুধু কালো ?”

প্রতিম মিথের কথার প্রশ্ন বা উত্তরের কোনোটারই জের না টেনে চুপচাপ বসে রইল । মিথও কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে প্রতিমের দিকে দু আঙুল বাড়িয়ে-ধরে বলতে লাগল,“ কোনটা ধরবে ধর ?”

প্রতিম বুঝতে পারলো না আঙুল ধরাধরির ব্যপারটা । প্রতিম নড়েচড়ে বসে চোখ বড়ো বড়ো করে বলল ,“ মানে !”

মিথ হড়বড়িয়ে মিষ্টি করে বলল , “ আরে বাবা ধরো না । কারণটা পড়ে বলছি ।”

প্রতিম মাথা ঝাকিয়ে ,“ তর্জনী ধরলো ।”

মিথ লম্বা শ্বাস নিয়ে হাসতে হাসতে বলল ,“ আমি কাল কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ব । আর তুমি পড়বে টারকোয়েজ রঙের শার্ট ।”

মিথ কথাগুলো বলে একটু থেমে প্রতিমকে শ্লাগ করে বলল , “ প্রমিজ প্রতিম কাল টারকোয়েজ রঙের শার্টটা পড়ছো তো ?”

প্রতিম মিথের মুখের দিকে তাকালো । তারপর চোখের দিকে । প্রতিম বুঝতে পারল তার ভিতরেও কি  একটা সায় দিচ্ছে । মিথ এবার প্রতিমের হাতটা চেপে ধরলো । প্রতিমও মিথের হাতটা চেপে ধরতেই । মিথ আরও একবার বলল ,“ প্রমিজ প্রতিম । বলো পড়বে ?”

প্রতিম মিথকে কোথায় যেনো আবিষ্কার করে ছোট্ট করে বলে দিলো ,“ প্রমিজ । ”

প্রতিম কে সেদিন এমন পোষাকে দেখে সবাই অবাক হয়েছিল । মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছিল সবাই সবার দিকে । প্রতিমের বন্ধু থেকে মিথের বান্ধবীরা । মিথ কলেজ গেটে অপেক্ষা করছিল । প্রতিম তার প্রমিজ রেখেছে কি না । হ্যাঁ প্রতিম তাকে গুরুত্ব দিয়েছে ।  মিথও এই দু আঙুলের পোশাকি খেলাটা দীর্ঘদিন চালিয়ে যাবে ভেবে মনে মনে আনন্দ পেল । হ্যাঁ মিথ , প্রতিমের স্মার্টনেস জীবনধারা ফিরিয়ে দিতে পেরেছিল । প্রতিমও তার শরীরের পোশাকি পরিবর্তনের মধ্যে অন্য এক প্রতিমকে খুঁজে পেয়েছিল ।

প্রতিম আবার গাছেদের বিয়ের স্বপ্ন দেখে । মিথও আসে তার স্বপ্নে । বসন্তের রঙধরা গাছে গাছে । কখনও ফুল হয়ে । কখনো পাখি হয়ে । প্রতিমের স্বপ্ন , চোখ থেকে বুকের মধ্যে নড়েচড়ে । সে এখন পাগলের মত মাঝে মাঝেই একা একা বকে , চিৎকার করে বলে,“ প্রমিজ মিথ । ”

প্রতিমের এই পরিবর্তনে যে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছিল সে হলো মিথ । প্রতিম যদি না বদলাতো তবে হয়তো সবচেয়ে কষ্টটাও পেত মিথ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন