লেখার ডাগর মাঠ


শুক্রবার, মার্চ ৩

ফুলের গায়ে রক্ত

মেয়েটার নিম্নাঙ্গে দিয়ে ততক্ষনে দরদর করে রক্ত ঝড়ছে । ঠোঁট দু’টো লালায় ভর্তি । শরীরের কতকগুলো জায়গায় তীক্ষ্ন নখের দাগ । মসৃণ হয়ে পরে আছে মেয়েটি । অনেক পুরোন রাজবাড়ির মত । আমি আরও একবার অনুসন্ধানী চোখে মেয়েটির দিকে তাকালাম । তারপর শিম্পাঞ্জিটির দিকে । শিম্পাঞ্জির বড়বড় লোমগুলো রক্তের দাগে ছোপছোপ লাল হয়ে আছে । লোমগুলোকে বাদ দিয়ে ভাবলে দানবাকৃতির মত একটা মানুষের মুর্তি চোখের সামনে ভেসে ওঠে । আমি মাঝে মাঝেই আতকে উঠছি । মনে হলো আমাকেও ডাকছে । ভয়ে আমার শরীরটা পালিয়ে যাবার ইঙ্গিত করছে । আমি বুঝতে পারলাম ঘুমের মধ্যে আমার মুখ থেকে চাপা গোঙারানির আওয়াজ বেরচ্ছে ।

“ অনিক , এই অনিক । আরে অমন করছ কেনো  ।”- আমার গায়ে হাত দিয়ে আমার বৌ ডাকল ।

আমি আলতু করে চোখটা খুলে মাথা বেকিয়ে পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ,আমার স্ত্রী । মাথাটা বালিশে রেখে ঠোঁট দুটো চেপে ধরে টানা একটা নিশ্বাস নিলাম । স্বপ্নের ঘোরটা মাথা আর মনে মধ্যে চেপে বসে আছে বুঝতে পারলাম । বিছানা থেকে উঠে লনের চেয়ারে বসলাম । সামনেই খবরের কাগজ ছিল । হাতে নিয়ে সেন্টার টেবিলে রেখে দিলাম । না । একদম ভাল্ লাগছে না । কেনো জানি স্বপ্নের ঘোরটা আমাকে প্রতিদিনের রুটিন থেকে বিচ্ছিন্ন করছে । আমার স্ত্রী সামনের চেয়ারে এসে বসল । আমি বরিষার দিকে তাকালাম । এলোমেলো লাগছিল বরিষাকে । বরিষার চোখের দিকে তাকালাম । বরিষাও আমার দিকে তাকাল । বরিষা উঠে গিয়ে তিন চার মিনিট পর এসে আবার আমার সামনের চেয়ারটায় বসলো । বরিষাকে উদাসীন উদাসীন লাগছে । বুঝতে পারলাম কিছু একটা হয়েছে । তা না হলে কিছু একটা বলবে । হুম । যা কথা তাই কাজ । বরিষা চাপা একটা ভাষায় বললো,“ অনিক তুমি কি একটা জিনিস লক্ষ করেছ । ”

আমি কথার মনে বুঝতে পারলাম না । কেনো জানি বরিষার কথাগুলো গোজামিল গোজামিল মনে হলো । আমি ঠোঁট চেপে হাই তুলে বললাম,“ মানে । তারবপ একটু থেমে ছোট্ট করে বললাম , না ।”

বরিষা আতঙ্ক গলায় চাপা কন্ঠে বলতে লাগল,“ সত্যি অনিক । আজ কাল দেখছি খাওয়া শোয়া ছাড়া তোমার আর কোনো কাজ নেই । দুদিন হলো বাড়িতেই রয়েছ । আর বলছ “না” । আমার কিন্তু ভীষণ ভয় ভয় লাগছে ।”

এই ভয় কথায় আমার বুকের ভিতরটাকে ছমছমে করে দিল । আতকে দিল । বরিষা কিসের ঈঙ্গিত করছে । তবে কি স্বপ্নের শিম্পাঞ্জিটা আমাদের ফ্ল্যাটে এসেছিল ! আমি কি তবে এসব স্বপ্ন-টপ্ন দেখিনি ? কথাগুলো ভাবতেই বরিষা চেঁচিয়ে উঠলো ।

“এই অনিক কথা বলছ না কেনো । কি হয়েছে ?”

আমি হঠাৎ রকমে শান্ত হয়ে । নিজেকে নিজের মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম । এসব কি হচ্ছে আমার সাথে । আমি কি মানসিক রোগি হয়ে যাচ্ছি ? নিজেকে সামলিয়ে বরিষার দিকে তাকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বললাম,“ কি হয়েছে বলতো । সত্যি আমি বুঝতে পারছি না । তুমি কি বোঝাতে চাইছো ।”

বরিষা কৌতূহলী গলায় বলল,“ কি আর হবে  । সকাল থেকে দেখছি আমাদের পূর্ব সাইডের ফ্ল্যাট-এর তিন তলার ঘরগুলোর জানলা তিনদিন হলো বন্ধ দেখছি । কেনো বলতো ....? আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে ।”

“ও এই কথা । হয়তো ভোরে কোথাও গিয়েছে ।”

“না অনিক । আমার সন্দেহ হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে । ওদের জানলা আমি কখনও এর আগে বন্ধ দেখিনি ।”

ঠাণ্ডা গলায় প্রশ্ন করলাম,“ শেষ জানলা খোলা কবে নাগাদ দেখেছো ?”

“বৃহস্পতিবার । তখন ক’টা হবে । এই রাত দশটা কি সাড়ে দশটা ।”

“তবে হয়তো কোথাও গিয়েছেন ।”-অনিক আস্তে করে বলল ।

“ না না অনিক । আমার ভীষণ রকমের সন্দেহ হচ্ছে । বড়ো-সড়ো একটা কিছু হয়েছে । দেখে নিও । তুমি পুলিশকে খবরটা দাও । ”

বরিষার অতি সন্দেহটা আমার ভাল লাগল না । ও বরাবরই এমন । অল্পতে অনেক কিছু ভাবে ।

আমি হালকা ধমক লাগিয়ে বললাম,“আচ্ছা আচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি কি করা যায় ।

চলবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন