লেখার ডাগর মাঠ


বুধবার, এপ্রিল ২৬

নাথুরাম গডসের জবান বন্দি

গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের কিছু জবানবন্দী :-
**********************************************

পাঞ্জাবের অম্বালা কারাগারে নাথুরাম গডসে এবং নারায়ন আপ্তেকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল ১৫ই নভেম্বর, ১৯৪৯ খ্রীস্টাব্দে। মৃত্যুর সময় তারা উচ্চারন করেছিল, "অখণ্ড ভারত অমর রাহে, বন্দেমাতরম।" বিচারপতি জি.ডি. খোসলা ভেবেছিলেন নাথুরাম উচ্চতর আদালতে আত্মপক্ষের সমর্থনে আবেদন করবেন কিন্তু জবানবন্দী দেবার পরে নাথুরাম গডসে কোন অবেদন করেন নি। ৩০২ ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

গান্ধী হত্যার পরে নাথুরাম গডসেকে আদালতে তুলে প্রধান বিচারপতি জি.ডি খোসলা আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কিছু বলতে বলেন। প্রায় একসপ্তাহ ধরে চলেছিল এই বিচার পর্ব। গান্ধীজীকে হত্যার পেছনে একটা দুটো নয় অন্ততপক্ষে ১৫০ টা কারন দেখিয়ে ছিলেন নাথুরাম গডসে। নাথুরামের যুক্তি শুনে প্রধান বিচারপতি সহ আদালতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ আশ্চর্যচকিত হয়ে গেছিলেন। শেষে বিচারপতি খোসলা বলেন, "আদালতে নাথুরামের জবানবন্দী সবচেয়ে আকর্ষনের জিনিস ছিল। আমি যদি উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সকলকে বলতাম আপনারাই নাথুরামের বিচার করুন তাহলে অধিকাংশ ব্যক্তি নাথুরামকে নির্দোষ ঘোষনা করত সেটাই আমার বিশ্বাস।" নাথুরামের জবানবন্দী যাতে জনসমক্ষে না আসে সেইজন্য তৎকালিন ভারত সরকার নাথুরামের জবানবন্দীকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন কিন্তু নাথুরামের ভাই গোপাল গডসে কয়েক দশক ধরে আইনি লড়াই চালান। শেষে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে ভারত সরকার নাথুরামের জবানবন্দীর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।

জবানবন্দীর কিছু অংশ....
************************
১. হিন্দু দর্শন, শাস্ত্র পড়ার পরে নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি......

২. আমি জীবনে গোখলে, বিবেকানন্দ সহ আরো অনেক মহাপুরুষের জীবনী পাঠ করেছি। সবচেয়ে বেশি কাউকে নিয়ে যদি পড়াশোনা করে থাকি তবে সেটা নিঃসন্দেহে গান্ধীজী। উনার দ্বারা খুব প্রভাবিত হয়েছিলাম......

৩. আমি জানি আমি কি করেছি। আমি গান্ধীজীর মত নেতাকে মেরেফেলেছি। আমি আমার জীবন নষ্ট করে ফেলেছি। আগামীদিনের ভারতবাসীর কাছে আমি জাতীর জনকের হত্যাকারী রূপে চিহ্নিত হব। আমার কোন দুঃখ নেই আমি গান্ধীকে মেরেছি.....

৪. গান্ধী অহিংসা, অহিংসা করে এতটাই মত্ত হয়ে উঠেছিলেন যে হিংসা এবং অহিংসার মধ্যে পার্থক্য কি সেটাই ভুলতে বসেছিলেন......

৫. গান্ধী হিন্দুদের জন্য কিছু করেন নি। কংগ্রেস চলত গান্ধীর কথায়। করাচি থেকে দিল্লী পর্যন্ত লক্ষ হিন্দু মারা গেছে স্রেফ গান্ধীর জন্য.......

৬. লর্ড মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেসের কাছে সবচেয়ে ভাল ভাইসরয় যে লোকটা ধর্মের ভিত্তিতে একটা দেশকে দুই ভাগে ভাগ করে দিল। দেশ ভাগের জন্যও গান্ধী দায়ী.......

৭. জুলাই, ১৯৪৭ সালের কংগ্রেস মিটিংয়ে অধিকাংশ নেতা দেশভাগের বিরোধিতা করেন কিন্তু মিটিং শেষ হবার আগে গান্ধী সেখানে গিয়ে দেশভাগের সমর্থনে চুড়ান্ত সইটি করেন। এক সময় যিনি বলেছিলেন "কংগ্রেস দেশ ভাগে উদ্যোগী হলে সেটা যেন আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে হয়।"..........

৮. ১৯৪৮ সানে ৩০শে ভারতের স্বাধীনতা পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার ১০ মাস আগেই দেশের একটা খণ্ড নিয়ে আরেকটা দেশ বানিয়ে দেওয়া হল। এসবের জন্য গান্ধী দায়ী........

৯. কখন সত্যাগ্রহ আন্দোলন করতে হবে, কখন সেটা প্রত্যাহার করে নিতে হবে সেটা গান্ধীই জানত। ভারতের আর কেউ জানত না। সত্যাগ্রহ প্রকৃতপক্ষে কি জিনিস সেটা গান্ধী হয়ত নিজেই জানত না.....

১০. দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা বজার রাখার জন্য হিংসার আশ্রয় নিতে হয়। এর মধ্যে আমি কোন পাপ দেখি না। মহারানা প্রতাপ সিং, ছত্রপতি শিবাজী, গুরুগোবিন্দ সিং এরাও তো হিংসার পথেই চলেছিল। হিংসা মানেই গান্ধীর চোখে সেটা পাপ......

১১. ১৯৩৯ সালে হরিপুরা অধিবেশনে নেতাজী সভাপতি নির্বাচিত হন কিন্তু এই গান্ধী পরাজিত পট্টভি সীতারামাইয়ার পক্ষ অবলম্বন করে নেতাজির বিরোধিতা করেন এবং নেতাজিকে দল ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এটা কি কোন হিংসার পথ নয়?......  

১২. ভগৎ সিং, রাজগুরু এবং শুকদেবের ফাঁসি রধের জন্য ভারতবাসীরা গান্ধীর শরনাপন্ন হয়েছিল তখন গান্ধী তাদের আবেদনের বিরোধিতা করে ভগৎ সিংদের বিপথগামী তরুন আখ্যা দিয়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশকে সমর্থন করেন........

১৩. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পরে ক্ষিপ্ত ভারতীয়রা চেয়েছিল ডায়ারের বিচার হোক কিন্তু গান্ধী সেই সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেন। উধম সিং জেনারেল ডায়ার কে হত্যা করলে গান্ধী প্রবল অসন্তোষ প্রকাশ করে উধম সিংকে বিপথগামী তরুন আখ্যা দেন.........

১৪. ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১ জন অনুপুস্থিত ছিলেন। ১৪ ভোটের মধ্যে সর্দার প্যাটেল ১৩ - ১ ব্যবধানে নেহেরুকে পরাজিত করেন। গান্ধীই, সর্দার প্যাটেলকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহনে বাঁধা দেন এবং নেহেরুকে গদিতে বসান.........

১৫. দেশভাগের পরে হিন্দু শরনার্থীরা দিল্লির মসজিদে কিছুদিনের জন্য আশ্রয় নিলে গান্ধী তার প্রবল বিরোধিতা করেন এবং সেইসব শরনার্থীদের রাস্তায় বাস করতে বাধ্য করেন.......

১৬. গান্ধী হচ্ছে সেই লোক যে সশস্ত্র দেশীয় বিপ্লবীদের বখে যাওয়া তরুন বলে ভৎসনা করে অথচ বুলেদের আঘাতে হাজার হাজার ভারতবাসীর প্রান নিয়ে নেওয়া ইংরেজদের বিশ্বযুদ্ধের মত সশস্ত্র ও হিংস্রতায় পরিপূর্ন প্রানঘাতী যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্য দিয়ে সাহায্য করার সময় সেখানে হিংসাকে আন্তরীকভাবে সমর্থন জানান........

১৭. গান্ধী ভারতের জাতির জনক হতেই পারেন না কারন গান্ধী অখণ্ড ভারত গড়েন নি। গান্ধী ভারতবর্ষের জন্মদাতাও নন তার থেকে গান্ধীকে পাকিস্তানের জনক বলাই ভাল কারন গান্ধীর জন্যই ভারত দেশের একটা অংশ কেটে নিয়ে অন্য একটা দেশ পাকিস্তান বানিয়ে দেওয়া হল.......

১৮. গান্ধীর দ্বারা দেশের কোন উপকার হবার ছিল না। আমার কাছে সবার আগে দেশ, তার আগে কেউ না। গান্ধীও না। আমার মনে হয় না গান্ধীকে মেরে আমি কোন অপরাধ করেছি.......

                    ..........(ধন্যবাদ).........

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :-
*****************
১. ইনটারনেট ও গুগল।
২. নাথুরাম গডসে সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিওগ্রাফি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন