লেখার ডাগর মাঠ


বুধবার, এপ্রিল ১৯

আমার কথা

গ্রামটি আত্রেয়ীর তীরে । মনোরম গ্রাম । আমি একদম নদী থেকে পঞ্চাশ হাত দূরে থাকতাম । অনেক সময় ক্লান্তি বোধ করলে নদীর পাড়ে ট্রায় স্যাইকেল নিয়ে দাঁড়াতাম । কি অপূর্ব হাওয়া । সমস্ত পৃথিবী যখন আগুনের আঁচে ঝলসে থাকে আত্রায়ীর তীর তখন ঠাণ্ডা শীতল । প্রথম যখন গ্রামটাতে যায় । তখন নদীতে খরার মৌসুমে জল থাকত গভীর । কিন্তু চলে আসার দু তিন বছর আগে থেকে দেখেছি সামন্য জল থাকত । কারণটা নাকি বাংলাদেশ কোথাও একটা বাঁধ দিয়েছে । নবান্নের সময় নদী থেকে অনেকেই বিশাল বড় বড় বোয়াল মাছ ধরত । গ্রামটাতে জেলে সম্প্রদায়ের লোক বেশি ।

গ্রাম হলেও যাত্রা , নাটক , বাৎষরীক খেলার প্রতিযোগিতা , কালচারাল প্রোগ্রাম হতো । বেশ কয়েকবার আমি গীটারও বাজিয়েছি । হুম । আমি আমার বাবার নামে একটা পুরস্কার দিতাম ক্লাবের মাধ্যমে । গ্রামটার আশে পাশে কিছু হাইস্কুল আছে । মাধ্যমিকে যারা ঐ গ্রামের যত স্কুল আছে তাদের মধ্যে সর্বচ্চো নাম্বার যে পেতে তাকে সেই চাদির পদকটা দেওয়া হতো । যাই হোক । গ্রামের লোকগুলো যে ধর্ম ও কুসংস্কারে পিছিয়ে ছিল তারি একটা সংস্কারণ করতে চেয়েছিলাম । আমি কিন্তু জানতাম এদের ধর্ম মূখী থেকে বিপরীত মূখি করা যাবে না । আমি ওদের বলতামও ধর্ম মান কিন্তু বিজ্ঞান মুখি চিন্তা ভাবনা নিয়ে ।

কেউ একজন এসে বলল , হিন্দুরা ঠাকুর পূজার সময় তিলোক কাটে কেনো ?
উত্তর আসত , তিলোক মুখের সুশ্রী ধরে রাখার জন্য । কেও হয়তো বলল , তিলোকে এন্ট্রিবায়োটিক আছে । জীবানু নাশ করে । এরকম হরেক রকম মতামত দিত ।

সব শুনার পর আমি বলতাম , ফিয়ার ইন লাভলী দিয়ে তিলোক কাটলে চন্দনের চেয়ে আরও বেশি উপকার পাওয়া যাবে । সুদল লাগালে জীবানু নাশের কাজ আরও বেশি করবে ।

একটা বয়স লোক আমার কথায় ক্ষেপে গেলেন । তিনি তো সরাসরি বলেই বসলেন । ভগবান তোমাকে এমনি এমনি ন্যাংড়া বানায়নি । ভগবান জানেন কাকে কি শাস্তি দিতে হবে । বয়স্ক লোক বলে কথাটা হজম করতাম । কিছু বলতাম না । তবে এমন আক্রমন লোকটা হরহামেশায় করত আমাকে । আমি সন্মানের খাতিরে কিছু বলতাম না । একদিন ভাষার চরম সীমানায় নিয়ে গিয়ে আমার শারীরিক দূর্বলতা নিয়ে আমাকে আক্রমন করাতেই । আমি অসহ্য হয়ে বললাম , কাকু আমার একটা প্রশ্ন আছে উত্তর দিতে হবে ?

লোক কটমট করে তাকিয়ে বলল , তুমি আর কি বলবে ।

আমি বললাম , যারা হ্যাণ্ডিকেপ তারা পাপি ?

লোকটা বলল , 100% শিওর ।

আমি বললাম , তবে তো তারা ঈশ্বর সান্নিধ্য পায় না ।

লোকটা বলল , ধর্ম গ্রন্থে লেখা আছে অন্ধ , কানা , ন্যাংড়া বোবা কালা এরা ঈশ্বরের কোন কিছু করতে পারে না । আর ঈশ্বর দর্শন তো দূরের কথা ।

আমি বললাম , বেশ কথা । শ্রীকৃষ্ণের বন্ধু সুদাম হ্যাণ্ডিক্যাপ ছিলেন । তিনি কি ভাবে পাপি হয়েও শ্রীকৃষ্ণের সখা হলেন ?

শ্রীকৃষ্ণকে তো আপনারা ভগবান মনেকরেন ।

কাকুটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি অবস্থা খারাপ । কিছু সময় নিয়ে বলল, তুমি সুদামের সাথে তুলনা করছ ?

আমি বললাম , কেনো করব না । আপনি হ্যাণ্ডিক্যাপ হওয়ার যেসব কারণ দিলেন তা যে আপনার বানানো কথা এটাই প্রমান করে । আর নাহয় আপনার ধর্ম গ্রন্থ স্ববিরোধী কথা লিখেছে ।

কিছুদিন পর কাকুর অনুপ্রেরণায় গ্রামে হরিবাসর । তখন 12 ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল । হরিবাসরে ফুল ভলিউম দিয়ে সারারাত মাইক দিয়ে গ্রামের লোককে হরিনাম শুনানোর যে যন্ত্রনা তার সারাজীবনের আক্রেল আমি দিয়েছিলাম ।

পরের দিন সকালে উঠে এর ওর কাছ থেকে থানার নাম্বারটা জোগার করে ঠিক সন্ধ্যায় থানায় ফোন করলাম । আর বলি , স্যার , এখন 12 ক্লাসের পরীক্ষা চলছে আর অমুক জায়গায় ফুল ভলিউম দিয়ে মাইক ব্যবহার করছে । আর কোথায় যাওয়া । হুম ঘণ্টা খানেক পর পুলিশ এসে হাজির । তবে মাইকটা পুরোপুরি বন্ধ করল না । ভলিউমটা একদম কমিয়ে দিতে বললেন । পুলিশটা গিয়ে বলেছিলেন , আপনাদের গ্রামের কেও একজন ফোন করে জানিয়েছে । ভাগিস তখন কয়েন বুদ ছিল । আমি কয়েন বুদ থেকে এই কর্মটা করতাম । এবং মাঝেমাঝেই করতাম । কিন্তু এখন তো কয়েন বুদ নেই । তাই আর পারিনা ......।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন