লেখার ডাগর মাঠ


শুক্রবার, আগস্ট ৪

ধর্ষণ

দেবজ্যোতিকাজলে’র অনুগল্প
ধর্ষণ

বিছানায় শুতে গিয়ে আইমা চমকে উঠল । তার বালিশের পাশেই ছিল একটা মাকড়সা । বাঁ হাতের ঝটকায় মাকড়সাটা ফেলে দিয়ে । তাঁর স্বামীর বালিশটা তুললো । বালিশের নীচে একটা সাদা খাম দেখতে পেলো আইমা । কৌতূহলী মন নিয়ে আইমা খামটা হাতে তুলে নিয়ে । খামটা খোলার চেষ্টা করল । আইমা খামের মুখটা খুলতেই একটা অল্প বয়সি মেয়ের ছবি দেখতে পেলো । কে এ ! এক ঝটকা ভাবতেই । আইমার ঘুম বেমালুম উবে গেল । ঝাপসা চোখ পরিস্কার হতেই । গাঢ় দৃষ্টিতে আইমা ছবির মেয়েটাকে চেনার চেষ্টা করল । কিন্তু চিনতে পারল না । বুক কেঁপে উঠল । সুমনকে আইমা ভালবেসে বিয়ে করেছিল । তাই আইমার ছোট পিসি  আইমাকে মজা করে মাঝে মাঝে বলতেন , “প্রেম করে তো বিয়ে করলি । ছোঁড়াটাকে চোখে চোখে রাখিস । এই প্রেমে পড়া ছোঁড়ারা মেয়ে মানুষ দেখলেই বারবার প্রেমে পড়তে চায় । ” সত্যি তো তাই । সুমনকে বিয়ে করে এক দিনের জন্যেও শান্তি পেলো না সে । বাবা মায়ের অমতে বিয়ে করে সুমনের সব খারাপ আচরণ হজম করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না । বাবা-মাকে বললেই হয়তো বলবে , “ তুমি যেহেতু নিজের পছন্দে বিয়ে করেছো । সম্পর্কের ভাল-মন্দ তোমার ।” সেই ভেবেই হজম করা ছাড়া তার আর কোন উপায় ছিল না । আইমা এখন নিঃসঙ্গ হয়ে গেছে । সংসারের এক কোণে কখন যে ফেলনা হয়ে রয়ে গেল তা বুঝে ওঠার আগেই মানসিক মৃত্যু ঘটে গেছে । কোনো ভাবেই সুমনের সাথে অ্যাডজাস্টমেন্ট করে উঠতে পারছে না আইমা । হয় তো আর পারবেও না । আটে না হলে তা যে আশিতেও হয় না । এ হচ্ছে গুণী জনের কথা । মানুষের একটা বা দুটো বদ অন্যায় কে মেনে নেওয়া যায় । কিন্তু একাধিক অন্যায় ক্ষমা করার মত মানসিক জোড় বা ভরসা কোনটাই ছিল না আইমার । অতীত বড় নিষ্ঠুর হয়ে বুকে চেপে বসেছে । যে অতীত আইমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল । বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল । পথ চলতে শিখিয়ে ছিল । আর আজ সে সব ভুলের মাশুল হয়ে কাঁদায় । তাকে কোনো ভাবেই ভুল বলে হেসে উড়িয়ে দেওয়া যায় না ।

সুমন যখন আইমার প্রেমিক ছিল । তখন ওর ঔ সহজ সরলতায় আইমাকে বোকা বানিয়ে রেখেছিল । সুমন বারবার আইমাকে বলত । প্রেম না কি গরিব বড়লোক মানে না । বয়সের ভার মানে না । এমন কি ,  ধর্মেরও কারণ হয়ে ওঠে না । মিথ্যা কথা । একদম ডাহা মিথ্যা কথা । প্রেম যদি ধর্মই না মানবে , তবে বিয়ে করতে গেলে ধর্মান্তরের প্রশ্ন উঠে কেনো ? রিমার ব্যাপারটা তো সচক্ষেই দেখলাম । রিমা যখন আসাদকে বিয়ের চাপ দিচ্ছিল । তখন আসাদ স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল । ধর্মান্তর না হলে নাকি আসাদ বিয়ে করতে পারবে না রিমা কে । রিমা অবশ্য আসাদকে বলেছিল , “আমি তো তোমার ধর্ম দেখে । তোমাকে ভালবাসি নি ! এখন এসব প্রশ্ন উঠছে কেনো ? ” কিন্তু আসাদ ছিল নাছড়-বান্দা । তাই , রিমা কোন পথ খুঁজে না পেয়ে । কালমা পড়ে আসাদকে বিয়ে করেছিল । সত্যি প্রেমের বই-এ কত না প্রকারের ফেক কোটেশন আছে । যা শুধু মিথ্যাই না , ডাহা মিথ্যা । এই ধর্ম পরিবর্তন ব্যপারটাই যেনো । আমার কাছে বড্ড গোলমেলে । ধর্ম কি পোষাক ! যে ,পছন্দ হলো না । ফেলে দিয়ে আর একটা পোষাক পড়ে নিলাম । ধর্ম আর প্রেম দুটো দুই প্রান্তের সামাজিক বাঁধন । মোহের আরাক নাম যদি প্রেম হয় । ধর্ম সেই মোহের শরীরে দেয় সিল মোহর ।
তবে কেনো বাপু এই মিথ্যা জ্ঞানের শিয়ালীপনা তরপাও । অনেক প্রকারের মিথ্যার মধ্যে, এই একটা মিথ্যা যুগ য়ুগ ধরে চলে আসছে । ভাবলেই গা গুলিয়ে ওঠে । যে “ প্রেম ভালবাসায় নাকি ধর্ম নেই ।”

আইমা সুমনকে বারবার চিৎকার করে তারার-সপ্তমে গলা চড়িয়ে ডাকতে লাগল ,“ কি গো শুনছো ? এ দিকে একটু এসো না । অনেক তো জ্বালালে । আর কিভাবে জ্বালিয়ে তুমি সুখি হবে ।"

সুমন বিরক্তি ভাব নিয়ে । আইমার সামনে দাঁড়াতেই । আইমা ছবির খামটা সুমনের দিকে বাড়িয়ে ধরল । সুমন খামটা হাতে নিয়ে । তাপ বা অনুতাপ না দেখিয়ে মেজাজ চড়িয়ে বলল , “তো.... ”

সুমনের নির্লজ্জপনা কথা শুনে । আইমার মেজাজও খিটমিটিয়ে গেল । আইমা তখন চিৎকার চেঁচামেচি করতে শুরু করল । এক সময়ে সেই ঝগড়াটা চরম মাত্রায় গিয়ে পৌঁছাল । আইমা যতটা গলা চড়িয়েছে । সুমন ছিল , তার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে । সুমনে হাতে যে সিগারেটটা ছিল । তা আইমার কাধে চেপে ধরে দাঁত কিটিমিটি করে বলল ,“ বেশ করেছি । ”

আইমা এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত  হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে । এরপর যা ঘটল তা যেনো ভালবাসার চরম লজ্জার  । অন্ধকার রাস্তা আইমাকে তিরস্কার করতে লাগল । পিসির কথাটা এতই মূল্যবান ছিল ! তা আগে কখনও ভেবে ওঠতে পারে নি আইমা ।

এদিকে সুমন ১০ মিনিটের মধ্যে ৫/৭ জন বন্ধুকে নিয়ে । আইমাকে এক অন্ধকার গলির মধ্যে ধরে ফেলে । সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে সুমন তার ভালবাসার বৌটিকে গণ ধর্ষণ করালো । আইমা সুমন কে চিনতে পেরেছিল । যখন সুমন আইমার উপর শারিরীক অত্যাচার চালাচ্ছিলো । বহুদিনের অভ্যাস গত বেডপার্টনার ছিল সুমন । তাই সুমনকে চিনতে অসুবিধা হলো না । সুমনের লালসার মধ্যে সুমন ধরে পড়ে গেল । সেই চেনা বেডপার্টনার আজ ধর্ষক ।

হঠাৎ পরিবেশটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল । সুমন এক সেকেণ্ড কি যেনো ভেবে । আইমার কাছে এসে দাঁড়ালো । আইমা অচৈতন্যে মুখ বাঁধা অবস্থায় মাঠের এক কোণে পড়ে আছে । সুমন প্রমান লোপাড করতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে । সুমন চায় না আইমার কাছে সে ধরা পোরুক । তাই ,আইনি প্রমান লোপাড করতে ।  আইমার শরীরে কেরসিনের তেল ঢেলে । জ্বালিয়ে দিতে ভুললো না । এই মানুষ সুমনটা কখন যে কনভার্ট হয়ে জানোয়ার হয়ে গেল । বেমালুম বুঝতে পারল না আইমা । আইমার মুখ বাঁধা ছিল বলে বলতে পারল না ,“ সুমন । তুমি কি সেই অতীতের সহজ সরল সুমন ! যাকে চিনতে এতটাই ভুল হয়ে গেল ।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন