লেখার ডাগর মাঠ


রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৮

আধুনিক বিজ্ঞানে ঐশ্বরিক ফাঁক

আধুনিক বিজ্ঞান ও ঐশ্বরিক ফাঁক
*******************************
(  ডা:আশীষ লাহিড়ী র " ভদ্রলোকি যুক্তিবাদের দক্ষিনা বর্ত "
বই থেকে  সংগৃহিত। )
সতেরো আঠেরো শতকে ইংল্যাণ্ড ও ফ্রান্সে যা ঘটল তার নাম আধুনিক বিজ্ঞান।
কোপার্নিকাসের হাত ধরে যার সূত্রপাত, ব্রাহে- কেপলার- গ্যালিলিও- বেকন - দেকার্ত -হয়ে অবশেষে
নিউটন এ তার পূর্নতা।  নিউটন এমন এক বিশ্ব প্রক্রিয়ার ছবি আঁকলেন যা সরল প্রাকৃতিক নিয়মে চলে, যাতে
ঈশ্বরের প্রয়োজন হয় কেবল সৃষ্টির  সময়, গোটা ব্যাবস্থাটাকে চালু করে দেওয়ার সময়। প্রত্যেকটা কাজের জন্য প্রত্যেকটা ধাপে আলাদা আলাদা  করে ঈশ্বরের হস্তক্ষেপের তত্ত্ব আর টিকল না। ধর্মতাত্ত্বিকদের আওতা থেকে বার করে এনে বিজ্ঞনচর্চার একটা স্বাধীন পথ তৈরী হোল এর ফলে।
একদিকে আদি স্রষ্টা ঈশ্বর, অন্যদিকে বলবিজ্ঞানের নিয়মে চলমান বিশ্ব, এর মাঝখানের ফাঁকটুকু ভরে রাখল  ডীইজম ( ডীইজম হল ন্যাচারাল রিলিজন,  যা মনে করে যে ঈশ্বর একজিন আছেন ঠিকই,  কিন্তু তাঁর কোনরকম অলৌকিক উদ্ভাস থাকতে পারেনা।)
আসলে এতদিনকার চালু বিশ্বাস রাতারাতি তো উবে যেতে পারে না। নিউটন নিজে খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাস করতেন, ট্রিনিটি সমস্যা  নিয়ে তাঁর প্রচুর কাজ আছে।  কাজেই তিনি তাঁর ' সিস্টেমে ' একটু ফাঁক  রেখে দিলেন।  বললেন আরসবই আপেক্ষিক,আর সবই বলবিজ্ঞানের নিয়মাধীন ; শুধু দেশ ( space)  অনাপেক্ষিক,  তা স্বয়ং ঈশ্বরের  
' চেতনা পীঠ ' ( sensorium) , সেখানে বল বিজ্ঞানের নিয়ম অচল।  পরে আইনস্টাইন ওই অনাপেক্ষিকের ফাঁক টুকু  বুজিয়ে দেন।
প্রানীতত্ত্বের দিক থেকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা বলে ঐশ্বরিক ফাঁক কিছুটা ছোট করে আনার প্রয়াস পেয়েছিলেন  ডারউইনও।  তবে তারপরেও ফাঁকটা বেশ বড়সড়োই ছিল।  অনেক সময় শারীরবৃত্ত  বা শারীরসংস্থানের বিভিন্ন অকল্পনীয় রকমের জটিল ও কর্মপটু বৈশিষ্ট দেখে  অভিভূত জীববিজ্ঞানীরা নিজেরাই বলতেন  ওস্তাদ কোন নকশাকারের ( ডিজাইনারের)অস্তিত্ব মেন না নিলে ঐসব ক্রিয়া বা গঠন কে  ব্যাখ্যা  করা যায় না। সবচেয়ে বড়োকথা,প্রানের উদ্ভবপ আর  পুনরুৎপাদন কীভাবে হয় তার কোন ব্যাখ্যা বর্ণনাত্মক জীব বিজ্ঞান দিতে পারত না। 
কিন্তু মেন্ডেল আর ডারউইনের মিলনে অবস্থা টা আমূল বদলে গেল।  ১৯২০  র দশকে  ওপারিন - হলডেন  অজৈব অনু থেকে জৈব অনুর উদ্ভবের তত্ত্বপ্রস্তাব রাখলেন। ১৯৫৩ সালে  ডি এন এর   জোড়া হেলিক্স কাঠামো আবিস্কারের পর জীববিজ্ঞান হয়ে উঠল বিশ্লেষনাত্মক আনবিক জীববিজ্ঞান। তখন থেকে ঈশ্বরের জীববৈজ্ঞানিক সাম্রাজ্য আর সর্বভৌম রইল না।  সেই আবিষ্কারের ৫০ বছর পুর্তি উপলক্ষে ২০০৩ সালে জেডি ওয়াটসন লেখেন, ' আমাদের এই আবিষ্কার  মানবপ্রজাতির  উদ্ভব কাল থেকে চলে আসা বিতর্কের অবসান ঘটাল। প্রানের মূলে কি ঐন্দ্রজালিক,  আধ্যাত্মরহস্যময় কোন কিছু আছে, নাকি তা বিজ্ঞানের ক্লাসে যেসব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটান হয় সেই রকমেরই কিছু স্বাভাবিক ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফসল?  কোষের মর্মমূলে কি  ঐশ্বরিক কোন কিছু থাকে যা তাতে প্রান সঞ্চার করে? জোড়া হেলিক্স এই প্রশ্নের যে সুস্পষ্ট উত্তর দিয়েছে  তা হোল   :  না ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন