লেখার ডাগর মাঠ


সোমবার, জুন ১৮

বাবার দেওয়া স্কুল পালানোর শাস্তি

।। বাবার দেওয়া শাস্তি জীবনেও ভুলব না ।।

তখন কোন ক্লাসে পড়ি ? সেভেন এইড হবে । বন্ধুরা মিলে নদীতে স্নান করতে গিয়েছি । নদীতে স্নান করতে যাওয়া মানেই মহা আনন্দ । আমাদের করতোয়া ছিল সে এক অপূর্ব উত্তরবাহি নদী । বন্যায় বাঘিনী আর খরায় হাঁটু জল । কোথাও কোথাও চড়ও জেগে উঠত ।

আমরা কখনই বাড়িতে কলে কিম্বা কুয়োতে স্নান করতাম না । সব বন্ধুরা মিলে নদীতে স্নান করতে যেতাম আর নদীতে যাওয়া মানেই এক ঘন্টা ।

তখন গরম কাল । বেশি সম্ভব চৈত্র কিম্বা বৈশাখ হবে । বারটা ছিল শনিবার । প্রতিদিনের মত বন্ধুরা মিলে নদীতে গিয়েছি । নদীতে গিয়ে গামছা দিয়ে মাছ ধরা , বালি টেনে টেনে এক ধরনের ফল বের করে খাওয়া । বালির মধ্যে পা ঢুকিয়ে দিয়ে তার উপর বালি চেপে পায়ের আকারে ছোট ছোট বালির ঘর বানানো । অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে নদীর পাড় থেকে ডিকবাজি দেওয়া । এযেনো ছিল নিত্য দিনের ঘটনা । সেদিন এসব করতে করতে স্কুলে যাওয়ার কথা ভুলে গেছি । স্নান করে বাড়িতে ঢুকেই দেখি বাবা ।  বাবা আমাকে দেখে মাকে বললো , ওকে খেতে দাও । হাটে নিয়ে যাব । সেদিন ছিল মীর্জাপুরের হাট । আমি তো হাটে যাওয়ার আনন্দে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম । তারপর বাবার সঙ্গে হাঁটা শুরু করলাম । কলেজ রোডে পর্যন্ত এসে বাবা আমাকে বললো , আজ হেঁটে হেঁটে হাটে যাব । প্রচণ্ড রৌদ্র তার পর আবার পাক্কা তিন মাইল কলেজ রোড থেকে মীর্জাপুরের হাট । আমি বললাম , না মটরে যামু । আমরা বাসগাড়িকে মটর বলতাম । বাবা বলল না , হেঁটে যাব ।

পাক্কা তিন মাইল বাবা আমাকে রৌদ্রের মধ্যে হেঁটে নিয়ে গেলো । মীর্জাপুর আসার আগের মূহুর্তে বাবা আমাকে বললো, স্কুলে যাসনি জন্য আজ এই শাস্তি দিলাম । এরপর স্কুল পালালে বগুড়া হাঁটায় নিয়ে যাব ।

হাট থেকে ফিরতি মুখে অবশ্য গাড়িতেই নিয়ে এসেছিল ।

স্কুল পালানো বাবা দেওয়া এই শাস্তি আমি জীবনেও ভুলবো না ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন