লেখার ডাগর মাঠ


শনিবার, আগস্ট ৮

অস্পৃশ্য শব্দটা আমাকে দুঃখ দেই



আমার বাড়ির পাশের পাড়াটির নাম ছিল তাম্বুলী পাড়া । তাম্বুলী তাদের বলে যারা পান খাওয়ার চুন বানায় । তাম্বুলী পাড়ায় আমার চার পাঁচজন বন্ধু ছিল । তারা আমার একদম পারানের বন্ধু ছিল । তারমধ্যে গোপীও ( সামাজিক কারণে নাম পরিবর্তন করা হল ) ছিল আমার বন্ধু । গোপী ব্রাহ্মণ পরিবারে মানুষ ।তার শিক্ষা-দীক্ষা থেকে সব কিছু চালাত সেই ব্রাহ্মণ পরিবারটি । ব্রাহ্মণ পরিবারটির যিনি কর্তী ছিলেন , তেঁনাকে গোপী মা বলে ডাকতেন । সমস্যাটা এখানে ছিল না । গোপীর টাইটেলটি ছিল সেই পরিবারের সমস্যা । গোপী তাম্বুলী ছিল ।  গোপীর সব ঘরের বিচরণে আমরা বুঝতে পারতাম না । গোপীকে খেতে দিত রান্না গরের বান্দায় । গোপীর শরীর এতটা অপবিত্র । সেই ছোট্ট বয়সে আমি বুঝতাম না । গোপীকে আমরা কখনও সেই বামুন পরিবারের রান্না ঘরে খেতে দেখি নি । রান্না ঘরে যদি গোপীর কিছুর প্রয়োজন হতো । রান্নাঘরের বাইরে গোগী দাঁড়িয়ে থাকত , বাড়ির কেউ একজন তা বের করে দিত । আমি ভাবতাম কারণটা কি ? গোপীর নিজের বাড়ির রান্না ঘরে ঢুকতে পারে না কেনো ? গোপী যে অস্পৃশ্যদের দলে সেটি বোঝার মত জ্ঞান বুদ্ধি আমার কোনটাই ছিল না । তবে বুঝতে পারতাম কোথাও একটা গণ্ডগোল আছে । ব্যপারটা যখন বুঝলাম ও জানতে পারলাম ভীতরে ভিতরে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম । হুম গোপী , দিনু , মৃণাল এরা সবাই ছিল অস্পরশ্যতার দলে । এমন কি আমার অতি ছোট বেলার বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বাডিতেও তাদের একটা গণ্ডি টানা ছিল । বাড়ির লোকদের অবহেলায় আমি বিরক্ত প্রকাশও করতাম । কেননা একটা সময় আমি যখন অসুস্থ হয়ে বিছায় পরে থাকি তারাই ছিল আমার বেঁচে থাকার রসদ । এরা আমার বন্ধু । এরপর আর কোন কথা থাকতে পারে না । গোপী যাকে মা ডাকে , আমি যার ছোটবেলার বন্ধু সেখানে তাম্বুলী হওয়ার কারণে লক্ষ্মণ রেখা টানা হবে এ আমি মন থেকে মেনে নিতে পারতাম না । আজও দিনগুলোর কথা মনে পড়লে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পায় । এদের জন্য কিছু করতে ইচ্ছা করে । ভেঙে ফেলতে মন চায় ধর্মের বেড়া কাঠি । শুধু ধর্মের কারণে সে বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও কেনো আমার সমাজে অবহেলিত হবে । গোপীকে আমি আমার বাড়িতে আসতে বলেছি । ও আসবে বলেও বলেছে । গোপী যদি সত্যিই আমার এখানে আসে ,ইচ্ছা আছে আমার রান্না ঘরে বসিয়ে দুজনে মিলে ভাত খাব । এক বিছায় শুয়ে পুরনো সময়ের গল্প করব । জানতে চাইব , ঠাকুর বাড়ির রান্না ঘরে তোকে ঢুকতে দেয় কি না এখনও । যদি গোপী উত্তরে না বলে । তবে গোপীকে বলব , ঠাকুর বাড়ির কর্তীকে তুই আর মা বলে ডাকিস না । রক্তের সম্পর্ক ছাড়া মায়ের মর্য্যদা হয় না । তুই তার জ্বলন্ত প্রমান ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন