লেখার ডাগর মাঠ


বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৪

বাবরি মসজিদ ভাঙার জের

বিরানব্বই সালে বাবরিমসজিদের উড়ে আসা আগুনের ফুলকি সারা বাংলাদেশে জ্বলেছিল। তখনো আগুন জ্বলে নাই। সবাই বাড়িতেই আছে, খাচ্ছে, চলাফেরা করে, স্নান করে, জ্যাঠু আর দিনের মতই স্নানসেরে রৌদ্রে বসে গায়ে সরিষারতেল দিচ্ছে, সাবাই কথাও বলছে কিন্তু কথায় কেনযেনো শব্দের জোর কম, উঠানে কুকুরটাও আছে কিন্তু আর দিনের মত সাড়াশব্দ নেই শুধু বসে বসে ঝিমোচ্ছে, সবই আছে তারপরও বাড়িটা কেমন নীরব, শুধু বাড়ি নয় পুরো গ্রামটিই একদম নিস্তব্ধ। মনে হচ্ছিল গ্রামটি প্রাণীহীন, মেঘনায় ভেসেউঠা কোন চর। আর সেই চরে নীরব নিস্তব্ধ অমাবস্যার ঘুট ঘুটে গাঢ় অন্ধকার রাতে প্রাণহীন কিছু প্রাণী। নিচুস্বরে আমাদের বলা হল বাড়ির বাইরে যেতে না। বাড়িশুদ্ধ সবাই কেমন যেন ভয়ে আতঙ্কের মধ্যে। মঙ্গলবার সন্ধ্যারপর পালালাম, পরদিন ভোরে এসে দেখি সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। এভাবে তিনদিন পালিয়েছি, তিনদিন ধরেই মুসলমানেরা চালিয়েছিল নির্মম নৃশংস বর্বরতা, লুটপাট ও গণহারে নারী ধর্ষণ আর আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয়দিন ঘরগুলি সব আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল। পাঁচ বছর বয়সের দেখা সেই বিভৎস ঘটনা গত ২৫-২৬ বছরেও ভুলি'নি আর বাকী জীবনেও তা ভুলব না।

ভারতে হিন্দু মুসলমানের কোন সঙ্ঘাত ঘটলে, সেটা দায় সুদেআসলে মেটাতে হয় বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুদের! বর্তমানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের আর মায়ানমার সরকারে সঙ্ঘাতে দায় মেটাতে হচ্ছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বৌদ্ধ ও আদিবাসীদের! তাঁরা চরম ভয়ে আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করতেছে। বাংলাদেশের মুসলমানেরা ওঁৎ পেতে রয়েছে বৌদ্ধ ও আদিবাসীদের ওপর হামলা করে তাঁদের মালামাল লুট ও নারীদের ধর্ষণ আর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার জন্যে। ভিডিওতে দেখলাম চট্রগ্রামের এক বৌদ্ধভিক্ষু ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার পথে সাতক্ষীরায় কিছু মুসলিম গুন্ডা তাঁকে চরম হেনস্থা ও গালিগালাজ করেছে, ভয় ভীতি দেখিয়ে বৌদ্ধদের ও সুচিকে গালাগাল করতে বাধ্য করেছে! প্রচণ্ড আতঙ্কের ছাপ ভিক্ষুর চেহারায় স্পষ্টছিল। প্রাণের ভয়ে ওই ভিক্ষু আবার ভারত চলে গেছে। এদিকে আরেকটি ভিডিওতে দেখলাম কয়েক হাজার মোল্লারা বিক্ষোভ করেছে, তাঁদের রক্ত টকবক করে উতরাইতেছে জিহাদের জোশে! তাঁরা নাকি আরো বিক্ষোভ করবে! প্রচুর ভয় হচ্ছে তাহলে কি আবার ৫ ই জানুয়ারী, নাসিরনগর বা রামু ঘটবে? বোঝাতেই পারছেন বৌদ্ধ ও আদিবাসীরা কতটা ভয় আতঙ্কের মধ্যে আছে। সরকার এখন কিছুই বলবে না করবে না, ঘটনা ঘটার পর বহুত কিছুই বলবে করবে! আমাদের প্রগতিশীল মানুষগুলো এই ব্যাপারে এখন অবধি নীরব, কিছু বলছেন না লিখছেন না। কেউ কেউ লিখছে। কিছু ঘটার আগে দয়াকরে কিছু বলেন, লেখেন, করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন