পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, জানুয়ারী ৮

গানের মত থেমে যায়


অতীত সূর্যউদয় সূর্যাস্তের মত পুরনো
অতীত চলতে চলতে পুরনো দিনের
গানের মত থেমে যায়, কখনও
আবার থেমে যাওয়ার মত করে
থামতে পারে না ৷
যারা চলে গেছে, তারা অতীত
যারা আছে তারাও অতীত
যারা বিচূর্ণ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে
ভাঙা রাজপ্রাসাদের ইটের মত ৷ তাঁরা
পুরনো অতীতকে পুরনো করছে
আমি তাদের কথাই বলবো ৷ কিম্বা
বলবো না, অনেক জনের কথা
হয় তো বা শুধু একজনের
সে অতীত ছিলো
সমবয়সীর চেয়ে দুবছরের ছোট
আজ তা এসে দাঁড়িয়েছে পঁচিশ বছরে
পঁচিশের বসন্ত প্রাচীতে ৷
যখন পূর্ণীমার চাঁদ
মধুময় আকাশ , সূর্যের কাঁধে হাত
রেখে দাঁড়িয়ে থাকে ৷ তখনই
শুরু হয় অবির আর রঙের খেলা ৷
চোখ তখন সৃষ্টি করে দর্শন শাস্ত্রকে
আর মন! সৃষ্টি করলো ফ্রয়েড কিম্বা লর্ড বাইরণ কে ৷
যারা অতীত তারা সূর্যউদয় সূর্যাস্তের
মত পুরনো ৷ তারা চলতে চলতে
থেমে যায় পথের মাঝে শ্বাস কষ্টে
দাঁড়িয়ে থাকে চোখ ভাঙা চাঁদের মত ৷
আজ তাঁদের কথাই বলবো
হে পাঠক!
এক্ষণি বাজবে স্কেলিটনের ঘন্টা
পথে মাঝে এসে
ব্যাক্তিটি শ্বাস-কষ্টে দাঁড়াবে
হ্যাঁ দাঁড়িয়ে আছে ৷
কাঁধে কী ছিলো? হ্যাঁ হ্যাঁ ছিলো ৷ কি যেনো ছিলো! একটা ঝোলা ৷ হ্যাঁ ঝোলা ঝুলছে ৷
ব্যাক্তিটি ওভাবে ঝোলায় হাতরে কি যেনো খুঁজচ্ছে ৷
তবে কি ঔষধ? না অন্য কিছু?
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ব্যাক্তিটিকে দেখছিলাম ৷
আমি শ্বাস কষ্টের অনেক রুগি দেখেছি ৷
এমন কখনও দেখিনি ৷ কী তার উৎপ্রেরণ, কি তার নিস্তল আবেগ ৷
কষ্ট তো কষ্টই ৷ হঠাৎ ভাবতেই…
আমি চমকে উঠলাম ৷ এ- কি!
ঔষদের বদলে বাঁশি! !
হ্যাঁ ব্যাক্তিটি ঝোলা থেকে
ঔষধের বদলে একটি বাঁশি বের করলো ৷
আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না
আমার মনের উৎবেগ ত্বরণের মতো এলো-মেলো হতে লাগলো ৷
এগিয়ে এলাম ৷ কাছে দাঁড়ালাম ৷
বাঁশের বাঁশি ৷
ব্যাক্তিটি বললো- খুউব কষ্ট ৷ বাঁশিতে একবার ফুঁ' দিয়ে তবেই শান্তি ৷
-শান্তি! বাঁশি বাজিয়ে! !
- হ্যাঁ গো ৷ বিহাগ না দরবারী! !
- কেনো ! কেনো! ঔষধ না খেয়ে ৷ বেহাগ , দরবারী?
ব্যাক্তিটি আর্তময়ূখে তাকিয়ে বললো- বুকে বড্ড বেশি অক্সিজেন জমেছে ৷ ভোরের মত ৷
হ্যাঁ, ভোরের মত ৷ ভোরের গন্ধের মতো ৷ হাসনা কিম্বা দোঁপাটির ৷
ভোরের একটা অতীত আছে ৷
আছে বর্ষবরণ ৷
যাকে আমরা প্রভাত বলি ৷ ভোরের অস্ত আছে ৷ কষ্ট আছে ৷ এমন কী গোধূলী ভোরও আছে ৷
শুধু নেই ভৈরবী ৷
তবে ব্যাক্তিটির কী আছে?
জীঞ্জেস করলাম- কেনো কেনো?
ব্যাক্তিটি বললো- বাঁশি যে অক্সিজেন খায় ৷ বুকের বিষ খায়
৷ কণ্ঠের রক্ত খায় ৷ মাথার মধ্যেকার শব্দ খায় ৷
শব্দ খায় ৷ হ্যাঁ শব্দ খায় ৷
অনাবিল আনন্দে খায় ৷ সে তো আমার কবিতাও খায় ৷ তবে ব্যাক্তিটির কী হতে পারে?
আমার শব্দগুলো মাঝে মাঝেই
আমাকে অন্ধ বৈরাগ্য করে দেয় ৷
হাড়িয়ে দেয় কবিতা ৷ হাড়িয়ে যায় হাত থেকে খসে পরা কলমের শব্দ ৷
ব্যাক্তিটি দরবারী ধরলো ৷ তানসেনের সেই বিচ্ছেদ- সুর ৷ বিচ্ছেদকে শুধু বিচ্ছেদ বললে ভুল হবে ৷ বিচ্ছেদেরও একটা মিলোন আছে ৷ সে মিলোন অপার- মিলোন ৷
আমি কান পেতে থাকি ৷ শব্দ খুঁজি ৷ ভোর খুঁজি ৷ আরও খুঁজি কোমল গান্ধার ৷
খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে না গিয়ে থেমে যায় পুরনো একটা বৃত্তের মধ্যে ৷
সে পুরনো অনেক পুরনো ৷ ঠিক পুরনো পোষাকের মত ৷ পুরনো বৃষ্টির মত ৷ পুরনো সূর্যের মত ৷ পুরনো নদীর মত ৷
আবার, সেই পুরনো পঁচিশ বছরের মত ৷
আমি বাঁশি শুনতে শুনতে আনমনে বলে ফেলি--
বাঃ! বাঃ! ! তুমি যে সেই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ৷ কি বিমর্ষ তাঁর শব্দ ৷ কী তীর ডাকার ভঙ্গি ৷ কী তাঁর উৎপীড়ন ৷
মন নীরব হয়ে যায় ৷
কেঁদে উঠে আকাশ বাতাস সূর্য্য ৷
চাঁদ ঔ চেয়ে থাকে ৷
সূর্যকে পিছন ফিরে ৷
ব্যাক্তিটিকে কিছু বলার আগেই দেখি ৷
পাশে একটি নারী ৷
ব্যাক্তিটি নারীটিকে দেখে , অশরীরী চোখে ৷
তারপর থামিয়ে দেয় বাঁশি ৷
তারপর স্থান ত্যাগ ৷ কেনো! কেনো! !
- এই ৷ শোন ………… শোনো ৷ আমি ভাষাটা ভুল ভেবে আবার বলি - এইযে শুনুন ৷
ব্যাক্তিটি আমার দিকে তাকিয়ে, নারীটির দিকে তাকালো ৷
নারী তাঁর পঁচিশ বছরের অতীত ৷
পুড়ে যাওয়া নদী ৷ বিবর্ণ নদী ৷
যে জমিতে শস্যের বদলে
জন্মেছিল আগুন ৷
পুড়ে গিয়েছিলো মাটির গন্ধ রস
হাড়িয়েছিলো নির্ভূল কল্পনার নির্মলতা
এরজন্যই কি ৷ সেই পঁচিশ বছরের সূর্যউদয় সূর্যাস্তের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা ?
আমি বিব্রত হৃদয়ে নারীটির কাছে দাঁড়িয়েও কিছু বলতে পারলাম না ৷ ব্যাক্তিটি ততক্ষণে আমার কাধে হাত রেখে বললো- এ বাঁশি সবসময় বাজে না ৷ মনের উপচিত পরাধিনতার পর্দাটা সরতে সরতে একটা অস্পষ্ট মুখ বেরিয়ে আসে ৷ তখন বাঁশি তার অপন গতি ফিরে পায় ৷ হ্যাঁ হ্যাঁ সত়্যি বলছি ৷ অগ্নিদাহ জমি ৷ বিবর্ণ নদী এবুকটাকে অবহেলা করেছিল ৷ ( একটু থেমে) ৷ সেই পঁচিশ বছর আগে ৷
ব্যাক্তি মিলে যায় শব্দহীনতায় ৷ সূর্যাস্তের মত ষড়ঋতুর আবর্তন ৷
ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের আটপৌড়ে মন ৷৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন